বিকেলের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ, ভিসির পদত্যাগের দাবি আন্দোলনকারীদের

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা অবশ্য বলেছে, তারা হল ছাড়বে না। তারা উপাচার্যের পদত্যাগও দাবি করেছে।

আজ সকাল আটটায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এই তথ্য জানানো হয়। সব ধরনের পরীক্ষা ও যাবতীয় একাডেমিক কার্যক্রমও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলছিল। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একজন লোকমান হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আমরা হল ছাড়ার নির্দেশ মানি না। অন্যায়ভাবে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই উপাচার্য ক্ষমা চান। এর পাশাপাশি তাঁকে পদত্যাগও করতে হবে।

আজ ভোর থেকেই একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করে। আটটার দিকে বন্ধের ঘোষণা শোনার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বেলা ১২টার মধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধিদের তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ গত মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হয়। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নগরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সম্মানে আয়োজিত চা-চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এসব অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে ও পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের কারণে গত মঙ্গলবার বিকেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়। শিক্ষার্থীদের এমন বিক্ষোভের মধ্যেই ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে ক্লাস ও সব ধরনের পরীক্ষা বর্জন করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। গতকাল বিকেলে একাডেমিক ভবনের তালা খোলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরেক দফা উত্তেজনা সৃষ্টি হলে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গতকাল বেলা পৌনে তিনটার দিকে প্রক্টর ও বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারীদের একাডেমিক ভবনে লাগানো তালা ভাঙার নির্দেশ দিলে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিলে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে চলে যান। এরপর প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষক ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, রাত সাড়ে নয়টার দিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনার পর রেজিস্ট্রার ও প্রক্টর শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না—এমন আশ্বাসের পর প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার না থাকা বিক্ষোভের অন্যতম কারণ। তাঁরা ওই দিন বিভিন্ন আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিতরণ করা বিশেষ খাবারও বর্জন করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (বিইউডিএস) আয়োজিত আন্তবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের সময় উপাচার্য এস এম ইমামুল হক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে অভিহিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কাল সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা দাবি তোলেন, উপাচার্যকে ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দেন তাঁরা। একই সঙ্গে তাঁদের বাকি পাঁচ দফা দাবি মেনে নেওয়ারও আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বছরজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এমনকি স্বাধীনতা দিবসেও তাঁদের জন্য আলাদা অনুষ্ঠান ও উন্নত মানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বছরে শুধু বিশেষ এসব দিনেই উপাচার্যের পক্ষ থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, বিশিষ্টজন ও সাংবাদিকদের সম্মানে চা-চক্রের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে ছাত্রদের কখনোই রাখা হয় না। হঠাৎই এ বছর শিক্ষার্থীরা এমন করছেন। তাঁদের না রাখা হলে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হবে না—সকাল থেকেই কিছু শিক্ষার্থী এ ধরনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। উপাচার্য বলেন, ‘কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া থাকতে পারে, কিন্তু সেটা স্বাধীনতা দিবসের মতো একটি বিশেষ দিনে তোলা হলো কেন? খুবই ঠুনকো একটা বিষয় নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করার কী যুক্তি থাকতে পারে?’

শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, যারা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চায় না, যারা এভাবে কথা বলে, তাদের আমি কী বলে আখ্যায়িত করব, তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। তারা স্বাধীনতার পক্ষে বলে তো মনে হয় না। তাদের ব্যবহার রাজাকারের মতোই।’

শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি দাবি করে উপাচার্য বলেন, ‌‘শিক্ষার্থীদের আমি কীভাবে রাজাকারের বাচ্চা বলি? বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানও তো রয়েছে। আমার কথা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের খেপিয়ে তোলা হচ্ছে। এর পেছনে অবশ্যই স্বাধীনতাবিরোধীদের হাত আছে।’