নৌকার সঙ্গে ঘোড়ার লড়াই

কক্সবাজার সদর উপজেলার চেয়ারম্যান পদ এত দিন দখলে ছিল জামায়াতের। এবার দলটি নির্বাচনের নেই। ফলে এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে দলের বিদ্রোহীর। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল (নৌকা) এবং দলের বিদ্রোহী কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আবছার (ঘোড়া)। সদর উপজেলায় নির্বাচন হবে ৩১ মার্চ। ভোট গ্রহণ হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে।

গত উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জিএম রহিমুল্লাহ। গত বছরের ২০ নভেম্বর তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।

দলীয় সূত্র জানায়, ১৮ ও ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে জেলার চকরিয়া, রামু, টেকনাফ, মহেশখালী, পেকুয়া ও উখিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ভোটাররা কেন্দ্রে যাননি। উখিয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হামিদুল হক চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হলে অপর পাঁচটি উপজেলায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। নির্বাচন বর্জন করায় ৩১ মার্চের সদর উপজেলা নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বেশির ভাগ ভোটার কেন্দ্রে যাবেন না বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সমর্থক ভোটারদের ওপর প্রার্থীদের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।

শুরুতে আওয়ামী লীগের পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তিন প্রার্থী আবু তালেব, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল জাহান চৌধুরী।

এখন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন পাঁচজন প্রার্থী। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন কায়সারুল হক জুয়েল, নুরুল আবছার ও সেলিম আকবর। অপর দুই প্রার্থী হলেন জাতীয় পার্টির আতিকুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র আব্দুল্লাহ আল মোর্শেদ ।

গত মঙ্গলবার কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নুরুল আবছার বললেন, নির্বাচন করতে তাঁর কোনো বাধা নেই। আগের দিন ২৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ ছিদ্দিকি হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেন এবং তাঁর প্রার্থিতা পুনর্বহালের আদেশ দিয়েছেন। ২০ মার্চ এলাকার ভোটার জসিম উদ্দিনের দায়েরকৃত রিটের শুনানি শেষে নুরুল আবছারের প্রার্থিতা বাতিল করেছিলেন হাইকোর্ট।

বাহারছড়া এলাকার ভোটার কামরুল ইসলাম বলেন, জেলার অপর পাঁচটি উপজেলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। বিদ্রোহীদের কাছে হেরেছে নৌকা। কক্সবাজারের অবস্থা কী হচ্ছে—তা নিয়ে চলছে ভোটারদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা।

ইভিএমে ভোট

জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে শুধু সদরে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হচ্ছে। নতুন পদ্ধতির ভোট নিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার ১০৮টি কেন্দ্রের ভোটার ও নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইভিএম পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিমধ্যে ধারণা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

একটি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬৪৪ জন। ১০৮টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ কক্ষ রয়েছে ৬৪৮টি। প্রতিটি কক্ষে ইভিএম ব্যালট ইউনিট থাকবে তিনটি করে। আর কন্ট্রোল ইউনিট থাকবে ৬৪৮টি। কোনো ইউনিটে টেকনিক্যাল ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে পুনঃস্থাপন করার জন্য অতিরিক্ত ১০০টি ব্যালট ইউনিট মজুত রাখা হবে।

নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে নয়জন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।