সুন্দরবনের পাশে শিল্পের অনুমোদন অস্বীকার

সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুন্দরবন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

*বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন
*সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ
*ইউনেসকোকে সরকারের প্রতিবেদন
*শিল্পকারখানা অনুমোদন না দেওয়ার দাবি
*শর্ত পূরণ করে বাড়তি উদ্যোগের দাবি

সুন্দরবনের চারপাশে ৩২০টি শিল্পকারখানা অনুমোদন দেওয়ার পর এখন সরকার ইউনেসকোকে বলেছে, সরকার সেখানে কোনো ভারী শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমতি দেয়নি। সুন্দরবনের কাছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের আগে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষাও (ইআইএ) যথাযথভাবে করেছে সরকার।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও প্রতিবেশব্যবস্থা বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান টিকিয়ে রাখার শর্ত হিসেবে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে সরকার অগ্রগতি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুন্দরবন রক্ষায় শিল্পকারখানা অনুমোদন না দেওয়ার পাশাপাশি ইউনেসকোর শর্ত পূরণ করে কিছু বাড়তি উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্মান থাকবে কি না, সে বিষয়ে চলতি বছর জুলাইয়ে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে।

তবে ২ মার্চ সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি থেকে ইউনেসকোকে দেওয়া এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ইউনেসকোর আপত্তির পরও সুন্দরবনের চারপাশের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সরকার ৩২০টি কারখানার অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি মারাত্মক পরিবেশদূষণকারী, যা সুন্দরবনকে পর্যায়ক্রমে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে। এ ছাড়া ইউনেসকো থেকে বলা হয়েছিল, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ সঠিকভাবে হয়নি, নতুন করে তা করতে হবে। কিন্তু সরকার নতুন করে ইআইএ করেনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রামপাল ও মোংলা এলাকার মানুষ আগে খেতে পেত না। তাই এলাকার দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য সেখানে শিল্পায়ন দরকার। বিদ্যুৎ না হলে তা হবে না, তাই আমরা রামপালে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য বলেছিলাম। সব ধরনের পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রেখে তা করা হচ্ছে।’ অন্য শিল্পকারখানাগুলোও পরিবেশ রক্ষা করে পরিচালিত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে পোল্যান্ডের ক্রেকাও শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির সভায় সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য রক্ষায় বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত দেওয়া হয়। সেখানে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত ও সুন্দরবনের চারপাশের শিল্পকারখানার অনুমতি না দেওয়াসহ মোট আটটি শর্ত দেওয়া হয়। বলা হয়, এসব শর্ত পূরণে বাংলাদেশ কী করল, তার একটি মূল্যায়ন ২০১৯ সালের সভায় আলোচনা হবে। তার আগে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছিল ইউনেসকো। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের ডিসেম্বরের দেওয়া ওই প্রতিবেদনে সরকার বলেছে, সুন্দরবনসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা (এসইএ) করতে একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়ার কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে যাতে কোনো ধরনের দূষণ না হয়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় বিশেষ পর্যবেক্ষণব্যবস্থাসহ একটি বিশেষ কর্মপরিকল্পনা ও ন্যাশনাল টাইগার রিকভারি প্রোগ্রাম হাতে নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে মিষ্টিপানির প্রবাহ বাড়াতে ভারতের সঙ্গে করা গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে যে পানি আসে, তার ব্যবহারে নতুন কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সুন্দরবনে মিষ্টিপানি যাওয়ার পথে প্রধান বাধা ছিল গড়াই নদ। সেটি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর সব কটি নদী খননের আগে ইআইএ করা হচ্ছে।

তবে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার কাগজে-কলমে যা-ই বলুক না কেন, আমরা দেখেছি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ ছিল ত্রুটিপূর্ণ। ফলে তা নতুন করে করতে হবে। সেখানে সব ধরনের শিল্পকারখানার কাজ বন্ধ করতে হবে, নয়তো সুন্দরবন রক্ষা পাবে না।’