চালুর তিন বছর পর জনবল পাচ্ছে খাদ্য পরীক্ষাগার

চালু হওয়ার তিন বছর পর অবশেষে জনবল পেতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের খাদ্য পরীক্ষাগার। নগরের বিবিরহাট এলাকায় অবস্থিত এই পরীক্ষাগার পরিচালনার জন্য ১৬টি পদসংখ্যার অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে এসব পদে নিয়োগ দিতে পারবে করপোরেশন।

ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করার জন্য ২০১৩ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে এবং আরবান পাবলিক অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট হেলথ সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ইউপিইএইচএসডিপি) আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি খাদ্য পরীক্ষাগারের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছরের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের খাদ্য পরীক্ষাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এতে ব্যয় হয় ২৮ কোটি টাকা। নির্মাণকাজ শেষে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এই পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়। এখনো এভাবেই চলছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, পরীক্ষাগারটি এখনো পর্যন্ত করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। বর্তমানে ইউপিইএইচএসডিপির আওতায় খাদ্য পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। পরীক্ষাগারে কর্মরত আছেন ১৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রকল্প থেকেই তাঁদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হচ্ছে। জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার পর পরীক্ষাগার করপোরেশনের আওতায় পরিচালিত হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন অনুযায়ী, এই পরীক্ষাগারের জন্য একজন পরিচালক, জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ একজন, জ্যেষ্ঠ মাইক্রোবায়োলজিস্ট একজন, রসায়নবিদ দুজন, মাইক্রোবায়োলজিস্ট একজন, উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) একজন, খাদ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা একজন, হিসাবরক্ষক একজন, কম্পিউটার অপারেটর একজন, পরীক্ষাগার সহকারী তিনজন, অফিস সহকারী একজন ও অফিস সহায়ক থাকবেন দুজন। তাঁদের বেতন-ভাতা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হবে।

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৩ পদের বিপরীতে ৩৪ জনের পদ সৃষ্টির জন্য দুই বছর আগে জনবল কাঠামো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। বিভিন্ন ধাপ শেষে এখন ১৬ জনের জনবল কাঠামো অনুমোদন দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে।

চালুর পরেও জনবল কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ায় পরীক্ষাগারের কার্যক্রম পুরোদমে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না বলে জানান সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা। পরীক্ষাগারে বিভিন্ন খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করা হলেও তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ নমুনাগুলোতে স্বাক্ষর করার কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। ফলে পরীক্ষাগার চালুর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। জনবল কাঠামো চূড়ান্ত হলে এই অবস্থার অবসান হবে।

খাদ্য পরীক্ষাগারে মাইক্রোবায়োলজিস্ট আশীষ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি সপ্তাহে গড়ে বিভিন্ন খাবারের ৮০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। জনবল কাঠামো চূড়ান্ত না হওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির খাদ্য বা খাবারের নমুনা পরীক্ষা করা হয় না। মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাঠানো নমুনাগুলো পরীক্ষা করা হয়।

নতুন জনবল কাঠামোয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের দাবি জানান আশীষ দাশ।

কী ভূমিকা রাখবে পরীক্ষাগার

খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং ভেজাল প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই পরীক্ষাগার। এই পরীক্ষাগারে খাদ্যের মান পরীক্ষা করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। নির্ধারিত ফি দিয়ে যে কেউ এখানে খাবারের মান যাচাই করতে পারবেন।

চট্টগ্রাম এলাকার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার খাদ্যসামগ্রী এবং আমদানি ও রপ্তানিযোগ্য খাদ্যসামগ্রীর গুণগত মান পরীক্ষা করা যাবে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি যেকোনো সময় এই পরীক্ষাগারে খাবারের মান পরীক্ষা করতে পারবেন। এই পরীক্ষাগারের সনদ নিরাপদ খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।

আধুনিক এই পরীক্ষাগারে ফলমূল ছাড়া দুধ ও দুধ জাতীয় পণ্য, মিষ্টি জাতীয় পণ্য, জুস জাতীয় পণ্য, কোমল পানীয়, সস, মসলা, বেকারি পণ্য, আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের মান যাচাই করা যাবে। এ ছাড়া মাছ-মাংস, শুঁটকি, সবজি, আচার-চাটনি, ভোজ্যতেলসহ আরও অনেক ধরনের খাদ্যের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।

সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, এই পরীক্ষাগার ভেজাল প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাবারের নমুনা পরীক্ষা থেকে প্রচুর অর্থ আয় করা যাবে।