গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় কন্যাশিশু দগ্ধ, সৎমা ও ভাই আটক
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় সৎমায়ের খুন্তির ছ্যাঁকায় এক কন্যাশিশুর হাত-পা, ঘাড়সহ শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতনের ফলে মেয়েটির শরীরে কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে ঘা। এমন নির্যাতনের খবর পেয়ে রোববার পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী।
ওই শিশুর নাম সেতু আক্তার (১০)। সে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামে রিয়াজ শিকদারের মেয়ে। সেতু কালামৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা রিয়াজ শিকদার ঢাকায় ভাঙারির ব্যবসা করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় নয় বছর আগে সেতুর মা রেহানা বেগম মারা যান। মা জীবিত থাকা অবস্থায় তার বাবা সাবিনা বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পরে সৎমা সাবিনা বেগম সেতুকে মেয়ে হিসেবে মেনে নিতে পাচ্ছিলেন না। অনেক বার সেতুকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন, এমনকি মারধরও করেন। এক বছর ধরে সৎনানির প্ররোচনায় শিশুটির ওপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। সৎমায়ের গরম খুন্তির ছ্যাঁকায় হুমকির মুখে পড়েছে তার জীবন। নির্যাতনের খবর পেয়ে স্থানীয় মানবাধিকারকর্মী মমতা খাতুন তাকে উদ্ধার করে রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনায় তার সৎমা সাবিনা বেগম (৪০) ও সৎভাই ছাব্বিরকে (১৪) আটক করেছে পুলিশ।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেতু আক্তার বলে, সৎনানির প্ররোচনায় তার সৎমা তাকে গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানের ছ্যাঁকা দিতেন। সৎভাই হাত ধরে রাখত আর সৎমা দিতেন গরম খুন্তির ছ্যাঁকা। বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকির ভয়ে নির্যাতনের বিষয়ে তার বাবাকেও সে কিছু বলেনি।
মানবাধিকারকর্মী মমতা খাতুন বলেন, ‘আমি লোকজনের মুখে সেতুর কথা শুনে ওর বাড়িতে গিয়ে ওর সৎমাকে বোঝানোর চেষ্টা করি। পরে আমি শিশুটির তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করি ও পুলিশকে বিষয়টি খুলে বলি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার মণ্ডল বলেন, ‘শিশুটির শরীরের পাঁচটি স্থানে গরম লোহার আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার ঘাড়, হা ও পায়ে ক্ষত রয়েছে। আমরা শিশুটির যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। আশা করছি শিশুটি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত।’
রাজৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খান মো. জোবায়ের বলেন, গত ২৪ মার্চ রাতে শিশুটির তার সৎমা ও নানির নির্যাতনের শিকার হয়। ওই নির্যাতনের খবর পেয়ে রোববার তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিশুটির সৎমা ও ভাইকে আটক করা হয়েছে। শিশুটির নানি পলাতক। এ বিষয়ে থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহানা নাসরিন বলেন, ‘মেয়েটিকে এখন চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সে যদি চায় তবে আমরা তার পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা নেব।’