সেতু ভেঙে দুর্ভোগে ৩০ গ্রামের মানুষ

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বংশীনগর খালের ওপর নির্মিত সেতুটির এক পাশ ভেঙে গেছে। গত মঙ্গলবার তোলা। প্রথম আলো
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বংশীনগর খালের ওপর নির্মিত সেতুটির এক পাশ ভেঙে গেছে। গত মঙ্গলবার তোলা। প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের মুথারচালা এলাকায় বংশীনগর খালের ওপর নির্মিত সেতুর পশ্চিম পাশ ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ১০ মাস ধরে আশপাশের ৩০ গ্রামের বাসিন্দা ভোগান্তির 

শিকার হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে প্রায় ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণ করা হয়, যা ২০১৩-১৪ সালে সংস্কার করা হয়। প্রায় ১০ মাস আগে সংস্কার করা সেতুটির পশ্চিম–দক্ষিণ পাশে ভেঙে যায়, যার ভাঙা অংশ প্রায় ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭ ফুট প্রস্থ। এতে মির্জাপুরের পেকুয়া, কাইতল্যা, মুথারচালা, বালিয়াজান, ইনতখাঁচালা, অভিরাম, বংশীনগর, নয়াপাড়া, বাঁশতৈল, পার্শ্ববর্তী সখীপুরের হতেয়া, রাজাবাড়ীসহ কালিয়াকৈরের কয়েকটি গ্রামসহ অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙা সেতুটির ওপর দিয়ে হেঁটে মানুষ চলাচল করছে। স্থানীয় ভ্যান ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের চালকেরা ভাঙা অংশের এক পাশে বাঁশ ও মাটি দিয়ে ভ্যান ও মোটরসাইকেল চালানোর উপযোগী করেছেন।

ইনতখাঁচালা গ্রামের ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, ‘১০ মাস ধইরা ব্রিজে গাড়ি যাইতে পারে না। হাঁটুভাঙাতে গাড়ি বোঝাই কইরা মাল নিতে গেলে মুথারচালা বাজার থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ঘুইরা কাইতল্যার কাঁচা রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়া যাইতে অয়। এতে সময় আর টাকা—দুইডাই ক্ষতি হইতেছে।’

মুথারচালা গ্রামের ভ্যানচালক দেবেন্দ্র নাথ বলেন, ‘হঠাৎ কইরা বড় গাড়ি চলাতে বিরিজটা ভাঙে। এরপর ভ্যান চালানোর জন্য আমি আর কয়েকজন মিল্যা পয়লা বাঁশ দিছি। তার ওপর মাটি দিয়্যা অহন কোনোমতে চলতাছি। রিস্ক আছে। কিন্তু পেট তো বাঁচান লাগব।’

ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের দুজন চালক বলেন, এই সড়ক দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ট্রাক, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ সহস্রাধিক যানবাহন চলত। স্থানীয় লোকজন ময়মনসিংহ যেতে চাইলে সড়কটি দিয়ে কালিয়াকৈরের ফুলবাড়িয়া হয়ে মাওনা, শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে উঠতেন। এ ছাড়া যানজট এড়াতে স্থানীয় লোকজন ঢাকায় যেতেও এই সড়ক ব্যবহার করত। কিন্তু সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় মানুষ সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশতৈল মনসুর আলী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইমরান হোসেন বলেন, তাঁদের বিদ্যালয় ছাড়াও সেতুটি দিয়ে বাঁশতৈলের খলিলুর রহমান কলেজ, বালিয়াজান উচ্চবিদ্যালয়সহ স্থানীয় কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাচল করত। কিন্তু ভাঙা সেতুর কারণে সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান সামছুল আলম বলেন, সেতুটি হওয়াতে সাধারণ মানুষ যে সুবিধা ভোগ করেছিল, এখন ঠিক সে রকমই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে জরুরি প্রয়োজনে সেতুর পূর্ব পাশের মানুষের মির্জাপুর সদর বা টাঙ্গাইল সদরে যেতে বেশি কষ্ট হচ্ছে। অনেকে বাঁশতৈল ইউপিতে কাজ করে সময়মতো গন্তব্যে যেতে পারছে না। রোগীদেরও দুর্ভোগ বাড়ছে। কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বাঁশতৈল, হাঁটুভাঙা বা মির্জাপুর বাজারে সময়মতো পৌঁছাতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতসহ প্রয়োজনে ওই স্থানে নতুন করে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।