জমিদার বাড়িটি ধ্বংসের পথে

বারীন মজুমদারের পৈতৃক বাড়িটি পাবনার রাধানগর মজুমদার পাড়ায়। ঘাট বাঁধানো পুকুরসহ বিশাল বাড়িসহ অনেক সম্পত্তি  এখন বেদখলে। ছবি: প্রথম আলো
বারীন মজুমদারের পৈতৃক বাড়িটি পাবনার রাধানগর মজুমদার পাড়ায়। ঘাট বাঁধানো পুকুরসহ বিশাল বাড়িসহ অনেক সম্পত্তি এখন বেদখলে। ছবি: প্রথম আলো

পাবনা জেলা শহরের রাধানগর মহল্লার মজুমদার পাড়া। শানবাঁধানো ঘাটের বিশাল পুকুর। পাড়ে বিশাল এলাকা নিয়ে ছিল জমিদার নিশেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি। নিশেন্দ্রনাথ ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতগুরু ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের বাবা। এই পরিবারের পদবি থেকেই মহল্লাটির নাম হয়েছে মজুমদার পাড়া। এখনো শহরের বুকে এই পাড়া টিকে থাকলেও জমিদারবাড়িটি এখন প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।

সংগীতগুরু ওস্তাদ বারীণ মজুমদারের জন্ম, বেড়ে ওঠা, সংগীতচর্চা—সবই হয়েছিল এই বাড়িতে। তাঁর স্মৃতিচিহ্ন বহনকারী এই বাড়ি আজ অনেকটাই বিধ্বস্ত। দখলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে পুকুর ও বাড়ির আঙিনা। ভেঙে গেছে পুকুরের শানবাঁধানো ঘাট। ফলে বাড়িটি উদ্ধার এবং সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন বারীণ মজুমদারের দুই ছেলে পার্থ সারথী মজুমদার ও সুভাশিস প্রতিম মজুমদার ওরফে বাপ্পা মজুমদার এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

মহল্লার লোকজন ও জেলা শহরের কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় আট বিঘা জমিতে পুকুর, বাগান, কয়েকটি সুসজ্জিত ইমারত, মন্দির, অনুশীলন কক্ষসহ বিভিন্ন স্থাপনা নিয়ে নির্মিত হয়েছিল জমিদার নিশেন্দ্রনাথ মজুমদারের বাড়ি। ১৯১৯ সালে এ বাড়িতেই জন্ম নেন জমিদারপুত্র বারীণ মজুমদার। বাবা নিশেন্দ্রনাথ ছিলেন সংগীতের ভক্ত। ছোটবেলা থেকেই সংগীতের প্রেমে পড়েন বারীণ মজুমদার। পরিবারের তরফ থেকেও তাঁকে সংগীতে উৎসাহ দেওয়া হয়। ভারত থেকে সংগীত বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তিনি বাংলাদেশে আসেন। সারাক্ষণ গানবাজনা নিয়েই থাকতেন। স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৮৩ সালে একুশে পদক, ১৯৯০ সালে সিধুভাই স্মৃতি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে রবীন্দ্র পদক, ১৯৯৫ সালে শ্রেষ্ঠ শিল্পী খেতাব, ২০০২ সালে স্বাধীনতা পদকসহ বিভিন্ন সম্মানে ভূষিত হন। সংগীতচর্চাসহ বিভিন্ন কারণে তিনি দেশের বাইরে থেকেছেন। তাঁর দুই ছেলেও পৈতৃক বাড়িটির খেয়াল রাখতে পারেননি। এ কারণে দিনে দিনে বাড়িটি দখল হতে শুরু করে।

সম্প্রতি পাবনায় এসেছিলেন বারীণ মজুমদারের বড় ছেলে পার্থ সারথী মজুমদার। তিনি জানান, ২০০১ সালে বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর তাঁরা পাবনায় আসেন। তখনই তাঁরা বাড়িটি দখলদারদের কবলে পড়েছে বলে দেখতে পান। দখলদারেরা নিজেদের পক্ষে কিছু কাগজপত্রও দেখান। কিন্তু কাগজগুলো সঠিক মনে না হওয়ায় ২০১৩ সালে তাঁরা দুই ভাই মামলা করেন। ২০১৬ সালে আদালত তাঁদের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু এতেও দখলদারেরা দখল ছাড়েননি। পরে তাঁরা দখল বুঝে পেতে আরও একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি চলমান।

পার্থ সারথী মজুমদার বলেন, ‘বারীণ মজুমদার শুধু আমাদের বাবাই ছিলেন না, তিনি এই রাষ্ট্রের সম্মান। তাই তাঁর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা বাড়িটি উদ্ধারের দাবি জানাই।’

মামলার আইনজীবী পুলক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘দখলদারেরা তাঁদের পক্ষে আদালতে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আবারও আমাদেরই জয় হবে।’

সম্মিলিতি সাংস্কৃতিক জোট পাবনা জেলা শাখার সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাদের দাবি, বাড়িটি উদ্ধার করে সেখানে বারীণ মজুমদারের নামে কিছু একটা করা হোক।’

পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘উপমহাদেশের বিখ্যাত এই সংগীতশিল্পী দেশের গর্ব। তাঁর বাড়ি দখলের বিষয়ে আমরা জানা ছিল না। পরিবারের সদস্যরা আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই বাড়িটি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’