মামলায় বন্ধ সৃজন কর্মসূচি

সড়কের দুই পাশের গাছ মরে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে ডালপালা। সম্প্রতি ভৈরব এলাকায়।  প্রথম আলো
সড়কের দুই পাশের গাছ মরে যাচ্ছে। ভেঙে পড়ছে ডালপালা। সম্প্রতি ভৈরব এলাকায়। প্রথম আলো

উপকারভোগীর দায়িত্ব হলো লাগানো গাছগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজনের অংশগ্রহণে ‘উপকারভোগী’ গঠন হয়। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য কিশোরগঞ্জ অংশে ৬৯টি, কটিয়াদী অংশে ৩৩টি, ভৈরব অংশে ২২টি, কুলিয়ারচর অংশে ৫৪টি এবং বাজিতপুর অংশে ৩৯টি লট সৃষ্টি করা হয়। গাছগুলো বিক্রির সময় ধরা হয় রোপণের এক যুগ পর। সেই হিসাবে কর্তনযোগ্য হয় ২০০৩ সালে। বিধি অনুযায়ী বিক্রির লভ্যাংশের ৫৫ ভাগ পাবেন উপকারভোগী, সওজ ১০ ভাগ, বন বিভাগের রাজস্ব খাতে যাবে ১০ ভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ৫ ভাগ, জমির মালিক ১০ ভাগ ও পুনরায় বনায়নের জন্য ১০ ভাগ রাখা হবে।

নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক বছর পর বন বিভাগ গাছ কাটার উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি। তখন গাছের সওজের পক্ষ থেকেও গাছের স্বত্ব দাবি করা হয়। এ নিয়ে সরকারের দুটি দপ্তরের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। চার বছর আগে বন বিভাগ থেকে ফের গাছ কাটার উদ্যোগ নেওয়া হলে বাধা আসে উপকারভোগী শ্রেণির ভৈরব ও কুলিয়ারচর অংশ থেকে। ওই দুই অংশের বেশ কয়েকটি লটেরউপকারভোগীর পক্ষ থেকে গাছের একক স্বত্ব দাবি করা হয়। কিন্তু বন বিভাগ উপকারভোগী শ্রেণির ওই পক্ষটির দাবি মানতে নারাজ। এ নিয়ে ফের দুই পক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। একপর্যায়ে উপকারভোগী পক্ষ থেকে গাছের স্বত্ব দাবি করে একাধিক মামলা করা হয়। বিবাদী করা হয় বন বিভাগকে। মামলার সূত্র ধরে আদালত সংশ্লিষ্ট লটগুলোতে গাছ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করেন। তখন গাছ কাটা নিয়ে ফের জটিলতা দেখা দেয়।

এক বছর আগ থেকে সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ শুরু হয়। তখন গাছ কাটা জরুরি হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় সমঝোতার ভিত্তিতে বন বিভাগ ও সওজ পৃথকভাবে অঞ্চল আলাদা করে দরপত্রের মাধ্যমে কিছু লটের গাছ বিক্রির উদ্যোগ নেয়। তবে মামলার কারণে অনেকগুলো লটে গাছ কাটার দরপত্র আহ্বান করা যায়নি।

কুলিয়ারচর অংশের সুবিধাভোগীর একটি পক্ষের মামলার বাদী বিল্লাল মিয়া। তিনি বলেন, ‘কুলিয়ারচর অংশটির বেশির ভাগ গাছ আমরা রোপণ করেছি। রোপণের প্রয়োজনীয় চুক্তিপত্র আমাদের সঙ্গে আছে। সেই হিসেবে আমরা গাছের একক মালিক। কাগজপত্র থাকার পরও আমাদের স্বত্ব অস্বীকার করে বন বিভাগ গাছগুলো বিক্রি করতে চায়। এ কারণে আমরা মামলা করেছি।’

ভৈরব অংশে মামলার বাদী আসমত আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি মামলাটি করেন ২০১৭ সালের শুরুর দিকে। আসমত আলীও একই দাবি করেন।

গত রোববার ভৈরব থেকে কুলিয়ারচর পর্যন্ত গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশের অনেক গাছ মরে গেছে। অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে। এতে করে সড়কের স্থানে স্থানে বড় ধরনের ফাঁকা হয়েছে।

জেলা ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা হারুন উর রশিদ বলেন, দীর্ঘ জটিলতা নিরসন করে অবশেষে বেশির ভাগ অংশের গাছ কাটার জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করে আনা হয়েছে। তবে মামলার কারণে কিছু লটে দরপত্র আহ্বান করা যায়নি। এ কারণে নতুন করে সৃজন করতেও সমস্যায় পড়তে হবে। বাজিতপুর ও কুলিয়াচর অংশের ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, তিনি আশা করছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার রায় হয়ে যাবে এবং রায় বন বিভাগের পক্ষে যাবে।