বড়াল রক্ষা আন্দোলনের মধ্যেই নতুন দখল

পাবনার চাটমোহর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদের পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে একদিকে বাঁধ অপসারণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে; অপরদিকে চাটমোহর পৌরসভা বড়ালের পাড় দখল করে বিপণিবিতান ও রাস্তা তৈরি করেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বড়াল রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা।

আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বড়াল নদে পানিপ্রবাহ ছিল। ১৯৮১ সালে রাজশাহীর চারঘাটে পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখে ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সীমান্ত এলাকা দহপাড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) দুটি জলকপাট নির্মাণ করে। এতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে নৌযান চলাচল ব্যাহত হতে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তখন নদ পারাপারের জন্য সেতু তৈরির দাবি তোলেন। কিন্তু সেতু না করে বড়ালে চারটি আড়াআড়ি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এতে বড়ালে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। দিনে দিনে দখল-দূষণে ২২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বড়াল পরিণত হয় মরা খালে। পানি না পেয়ে ব্যাহত হতে থাকে বিস্তীর্ণ চলনবিলের চাষাবাদ। এতে ক্ষিপ্ত হতে শুরু করেন বড়ালপাড়ের বাসিন্দারা। ২০০৮ সালে বড়াল রক্ষায় তৈরি হয় আন্দোলন কমিটি। সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত বড়াল থেকে সব বাঁধ ও জলকপাট অপসারণের নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী বাঁধ অপসারণ করে সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে স্বস্তি ফিরতে থাকে বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের।

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির নেতারা জানান, সেই স্বস্তি বড়ালপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বড়ালের পানিপ্রবাহ সচল রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও চাটমোহর পৌরসভা উপজেলা সদরের পুরোনো বাজার এলাকায় নতুন করে বাড়াল দখল শুরু করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ বড়ালের পাড় দখল করে আড়াআড়ি ৫০০ থেকে ৬০০ ফুট এলাকায় মাটি ভরাট করেছে। এখন সেখানে বিপণিবিতান তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দোকান তৈরি করে তা বিক্রি করা হয়েছে। এতে বড়ালের ওই অংশ সংকুচিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরোনো বাজার এলাকায় দুই পারের বাসিন্দাদের সংযোগ করেছে একটি সাঁকো। তবে সাঁকোর নিচের বড়ালে কোনো পানি নেই। কচুরিপানা আর আগাছায় ঢেকে আছে পুরো এলাকা। কিছু স্থানে চলছে ধানচাষ। সাঁকোর কাছে নদের পাড় দখল করে মাটি ভরাট করা হয়েছে। তৈরি করা হয়েছে টিনের একটি বিপণিবিতান। দুই পাশে ২০টি দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে তৈরি পোশাক।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৌর কর্তৃপক্ষ রাস্তা তৈরির কথা বলে মাটি ভরাট করেছে। পরে সেখানে বিপণিবিতান তৈরি করে বিক্রি করা হয়েছে। এতে নদের এই অংশের প্রশস্ততা কমে গেছে।

এ প্রসঙ্গে চাটমোহর পৌরসভার মেয়র মির্জা রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একসময় ওই স্থানে নদের পাড় দিয়ে একটি রাস্তা ছিল। আরএস মানচিত্রেও রাস্তা আছে। যা পরবর্তী সময়ে নদে বিলীন হয়। ফলে স্থানীয় লোকজনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা রাস্তাটি তৈরি করেছি। কিছু গরিব লোক সেখানে দোকান তৈরি করে ব্যবসা করছে। আমরা মার্কেট করিনি।’

বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব মিজানুর রহমান বলেন, ভাঙনের পর নদ দিক পরিবর্তন করে যে দিক দিয়ে যাবে, সেটাই নদ। ফলে কেউ ইচ্ছা করলেই ভরাট করে মার্কেট করতে পারেন না। তাঁরা নদী রক্ষা কমিটির সভায় বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার অসীম কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে দোকানঘরগুলো অবৈধ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত করে উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছি। অনুমোদন পেলেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। অন্যদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আর মাটি ভরাট করবে না বলে জানিয়েছে।’