দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন স্টেশনে সময়ক্ষেপণসহ নানা কারণে খুলনা-চিলাহাটি রেলপথের জনপ্রিয় রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এগুলো প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিলম্বে চলাচল করছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে।
রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের অন্যতম দীর্ঘ রেলপথ খুলনা-চিলাহাটি। এর দূরত্ব ৪৪৭ কিলোমিটার। এই রেলপথে চলাচলকারী রাত্রীকালীন সীমান্ত এক্সপ্রেস ও দিনের রূপসা এক্সপ্রেস আন্তনগর ট্রেন দুটি লাভজনক। ওই ট্রেনগুলো দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার যাত্রী চলাচল করে। অথচ তিন মাস ধরে ওই ট্রেন দুটির শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। এর মধ্যে রূপসা এক্সপ্রেসের সকাল ৯টা ২ মিনিটে এবং সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনের ৭টা ৫০ মিনিটে সৈয়দপুর রেলস্টেশন ছাড়ার কথা।
ট্রেন দুটির বিলম্বে চলাচলের কারণ সম্পর্কে রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ সূত্র বলছে, আগে সীমান্ত ও রূপসা এক্সপ্রেস সৈয়দপুর-খুলনা গন্তব্যে চলাচল করত। পরে গন্তব্য পুনর্নির্ধারণ করায় এগুলো নীলফামারীর চিলাহাটি পর্যন্ত চলছে। ফলে দূরত্ব বেড়েছে ৫৪ কিলোমিটার। আসা-যাওয়ায় তা ১০৮ কিলোমিটার। ফলে প্রতিদিন অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। গত জানুয়ারি মাসে খুলনায় আধুনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করা হয়। এরপর ওই ট্রেন দুটি নতুন স্টেশন ব্যবহার করছে। কিন্তু নতুন স্টেশনে রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। সেখানে নেই ট্রেন পরিচ্ছন্ন, পানি সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা। এমনকি ইঞ্জিনে জ্বালানি ভর্তি করার ব্যবস্থাও নেই স্টেশনটিতে। এসব সমন্বয় করতে প্রতিদিন ওই স্টেশনে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অতিরিক্ত সময় অপচয় হচ্ছে।
গতকাল বুধবার সকাল ১০টার দিকে সৈয়দপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শ যাত্রী অপেক্ষা করছে। শোভন শ্রেণির ওয়েটিং রুমে অপেক্ষমাণ যাত্রী চন্দন দেবনাথের সঙ্গে কথা হয়। রেলস্টেশনে এসে ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রূপসা ট্রেনে কুষ্টিয়ার পোড়াদহে যাব। পরিবারসহ সকাল থেকে অপেক্ষায় আছি। কখন যে ট্রেন ছাড়বে জানি না। অপর যাত্রী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাহাতুন্নেছা বলেন, ‘সকালের ট্রেন চার ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। খুলনা পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। খুব ভয় পাচ্ছি। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।’ রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১টা ২০ মিনিটে খুলনার উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যায়।
স্টেশনের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রূপসা ও সীমান্ত দুটি ট্রেনই বিলম্বে চলাচল করছে। ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বিলম্বে চলছে এসব ট্রেন। আগের দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোর পৌনে পাঁচটায় সৈয়দপুর স্টেশন থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। প্রতিদিনই এমন বিলম্ব হচ্ছে। এই সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
সৈয়দপুর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার শওকত আলী ট্রেন দেরিতে চলাচলের কথা স্বীকার করে বলেন, শিডিউল ধরে রাখা যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় রেলওয়ে পাকশী বিভাগের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আবদুল আল মামুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, চিলাহাটি থেকে খুলনা পর্যন্ত রেলপথটি দেশের অন্যতম দীর্ঘ রেলপথ। এই পথে রয়েছে ১২৪টি রেলস্টেশন। অথচ লোকবলের অভাবে এরই মধ্যে ৫৩ স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্টেশনমাস্টার ও পয়েন্টসম্যানের অভাবে ওই স্টেশনগুলো চালু রাখা যায়নি। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের এটিও একটি কারণ। কেননা স্টেশন বন্ধ থাকায় দূরের স্টেশনে বিপরীতমুখী ট্রেনকে ক্রসিং দিতে হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ সময় স্টেশনে থাকতে হচ্ছে ট্রেনগুলোকে। এতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সংকট দ্রুতই কেটে যাবে। শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষ ওই স্টেশনগুলোতে চুক্তিভিত্তিক লোক নিয়োগ করে তা সচল করবে।