রহস্য উদ্ঘাটিত হয়নি ৪২ মাসে

দুর্গাপুরে দম্পতি হত্যা
দুর্গাপুরে দম্পতি হত্যা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় শোবার ঘরে দম্পতিকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার তিন বছর পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটিত হয়নি। আলোচিত এই হত্যার ঘটনার মামলার পাঁচবার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) রয়েছে।

এদিকে হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী নিহত দম্পতির বড় ছেলে সুজিত সাহা। তিনি বলেন, ‘থানা-পুলিশ থেকে সিআইডি তদন্তভার নেওয়ার পর তিনবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছিল। বছরখানেক ধরে এখন ময়মনসিংহের পিবিআই পুলিশ মামলার তদন্ত করছে। হত্যার তিন বছর পাঁচ মাস চলে গেলেও পুলিশ রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারছে না। মা-বাবাকে তো আর ফিরে পাব না, কিন্তু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন ও হত্যাকারীদের বিচার হলে কিছুটা শান্তি পাব।’

পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, মামলাটি এখন ময়মনসিংহের পিবিআই পুলিশ তদন্ত করছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্‌ঘাটন সম্ভব হবে।

পুলিশ ও ওই দম্পতির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর নিজ বাসার তিনতলার শয়নকক্ষে খুন হন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সাহা (৭৪) ও তাঁর স্ত্রী হেনা রানী সাহা (৬৫)। অরুণ কুমার সাহার মধ্যবাজার এলাকায় ‘সুবর্ণা প্লাজা’ নামে তিনতলা মার্কেট এবং সেখানকার সুবর্ণা বস্ত্রালয়ের মালিক ছিলেন। তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা প্লাজার তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাঁদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। এক ছেলে ও দুই মেয়ে বিদেশে থাকেন। বড় ছেলে সুজিত কুমার সাহা মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। সুজিতের স্ত্রী দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। ঘটনার আগের দিন সুজিত মা-বাবাকে বাসায় রেখে পারিবারিক কাজে ঢাকায় যান। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর মা-বাবার খোঁজ নিতে মুঠোফোনে কথা বলতে চান। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় দুপুরের দিকে পাশের বাসার কাকা অজিত কুমারকে ফোন করে খোঁজ নিতে বলেন। অজিতের স্ত্রী সুচিত্রা তৃতীয় তলায় অরুণের বাসার দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকে পৃথক দুটি কক্ষের মেঝেতে গলাকাটা ও ক্ষতবিক্ষত লাশ পড়ে থাকতে দেখে ভয়ে চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলে ও লাশ উদ্ধার করে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে এবং খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিভিন্ন সময় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী বিক্ষোভ, মানববন্ধন, হরতাল ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করেন।

খুনের তিন দিন পর ২৬ অক্টোবর তাঁদের বড় ছেলে সুজিত সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে দুর্গাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম খান তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এ ঘটনায় পুলিশ হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে মামলাটির তদন্তভার দুর্গাপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে ওই বছরের ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়। সেখান থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহ পিবিআইয়ে স্থানান্তরিত হয়। সিআইডিতে থাকাকালীন তিনবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। নেত্রকোনা সিআইডিতে দায়িত্বে থাকা তখনকার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘এই জোড়া খুনের তদন্তভার এক বছর চলে যাওয়ার পর আমাকে দেওয়া হয়েছিল। অনেক দিন চলে যাওয়ায় খুনের কিছু আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। সন্দেহে থাকা কয়েকজনের ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল রেকর্ডও পাওয়া যাচ্ছে না।’

মামলার বর্তমান অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পিবিআই ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘খুনের কিছু আলামত তখন সংরক্ষণ না করায় একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তবে সব বিষয় মাথায় রেখে পিবিআই তদন্ত চালাচ্ছে। আশা করছি, এ রহস্য আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হব।’