বেগুনি রঙের ধান চাষ দেখতে মানুষের ভিড়

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভেদিকুড়া গ্রামে সড়কের পাশে রোপণ করা হয়েছে বেগুনি রঙের নতুন ধান। ছবিটি গত মঙ্গলবার সকালের।  প্রথম আলো
শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভেদিকুড়া গ্রামে সড়কের পাশে রোপণ করা হয়েছে বেগুনি রঙের নতুন ধান। ছবিটি গত মঙ্গলবার সকালের। প্রথম আলো

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় প্রথমবারের মতো চাষ হচ্ছে বেগুনি রঙের ধান। এই ধান চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এই ধানের খেত দেখতে আগ্রহী মানুষ ভিড় করছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লার আদর্শ সদরের মনাগ্রামের কৃষক মনজুর হোসেন ২০১৭ সালে সুন্দরবন এলাকায় বেড়াতে যান। এ সময় বেগুনি রঙের কিছু বিরল জাতের ধানখেত তিনি দেখতে পান। পরে সেখান থেকে তিনি এই ধানের কিছু বীজ সংগ্রহ করেন। বাড়ি ফিরে অন্য কৃষকদের সঙ্গে তিনি এই ধান নিয়ে কথা বলেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় কৃষি কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। এ ধান সম্পর্কে সন্তোষজনক কোনো তথ্য না পেয়ে নিজেই কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। ধানগুলো রোদে শুকান এবং বোরো মৌসুমে নিজেই চেষ্টা করেন চারা উৎপাদনের। চেষ্টা সফল হয়। পরে ছোট্ট পরিসরে এই ধান রোপণ করেন। সবুজের মধ্যে বেগুনি রঙের এই ধানখেত দেখে যেকোনো কৃষকের দৃষ্টি কাড়ে। পরে পরপর দুই মৌসুমে আশানুরূপ বীজ সংগ্রহ করেছেন মনজুর হোসেন। বেগুনি রঙের এ বিরল জাতের ধানের তিনি নাম দেন ‘বঙ্গবন্ধু ধান’।

ইউসিবিএল ব্যাংকের কর্মকর্তা নালিতাবাড়ীর সন্তান সারোয়ার আলম এই মনজুরের কাছ থেকে পাঁচ কেজি বীজ সংগ্রহ করে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে জমা দেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল আগ্রহ নিয়ে উপজেলার ভেদিকুড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল আলমের ৫ শতাংশ জমিতে এবার ধান লাগিয়েছেন। শুরুতেই সবুজের মধ্যে ধূসর রঙের খেত দেখে অনেকেই মনে করতেন খেতটি অযত্নে মরে গেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধানগাছের পাতা গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করে। প্রতিদিন এই খেত দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় করে। অনেক কৃষক আগামী মৌসুমে এই ধানের চাষ করতে কৃষক শহিদুল ও কৃষি কার্যালয়ে যোগাযোগ করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, রোদের প্রখরতায় বেগুনি রং আরও গাঢ় রং ধারণ করেছে। ফলন ভালো হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় কৃষকেরা। শহিদুল আলম বলেন, নতুন এই ধান দেখতে প্রতিদিন মানুষ ভিড় করছে। অনেক কৃষক এই ধানের চাষ করতে বীজ চেয়েছেন।

মনজুর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, একরে ৪০ থেকে ৪৫ মণ ধান পাওয়া যায়। এলাকাভেদে কমবেশি হতে পারে। নতুন এই ধানের নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু ধান। সারোয়ার আলম বলেন, ধানের রং দেখতে খুব সুন্দর, ফলনও ভালো হয়। আগামী দিনে অনেক কৃষক এই ধান চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফ ইকবাল বলেন, কাটার পর এই ধানের পুষ্টিগুণ জানতে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে। কৃষকের মধ্যে এই ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই ধান এলাকায় সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।