মহাসড়কে পদচারী-সেতু চান দনিয়া-কাজলাবাসী

পদচারী–সেতু নেই। তাই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হতে হয় পথচারীদের। গত বুধবার রাজধানীর কাজলা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পদচারী–সেতু নেই। তাই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হতে হয় পথচারীদের। গত বুধবার রাজধানীর কাজলা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো

আফরিন আক্তার, দনিয়ার এ কে হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী। স্কুল ছুটি শেষে কাজলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দৌড়ে পার (দক্ষিণ থেকে উত্তর) হচ্ছিল সে। কিন্তু মধ্যপথে না পৌঁছাতেই একটি ব্যক্তিগত গাড়ি এসে পড়ল। চালক দ্রুত ব্রেক করায় অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় আফরিন। গত বুধবার দুপুরে এমন দৃশ্য দেখে আশপাশের লোকজন তাকে বললেন, ‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলা।’ আফরিন কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে হাঁটতে শুরু করল। তার চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কাজলার হাজারো মানুষ নানা প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে দনিয়া এলাকায় যায়। আবার দনিয়ার মানুষও আসে কাজলায়। এতে মহাসড়কটিতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দুই পারের মানুষের নিরাপদে সড়ক পারাপারের বিকল্প ব্যবস্থা নেই। অবিলম্বে এ এলাকায় একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করা দরকার।
গত বুধবার দুপুরে দেখা গেল, কাজলায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের গোড়ায় একটি ফাঁকা জায়গা দিয়ে প্রতি মিনিটে ১৫ থেকে ২০ জন করে পথচারী ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পার হচ্ছে। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজপড়ুয়ার সংখ্যাই বেশি। অনেক পথচারী যখন একসঙ্গে রাস্তা পার হয়, তখন দূর থেকে গাড়ির গতি কমিয়ে দেন চালকেরা। আর কেউ যদি একা সড়ক পার হতে যায়, তখন গাড়ির গতি না কমিয়ে দ্রুত পাশ কাটিয়ে চলে যান চালকেরা। এই সড়কে পদচারী-সেতু, জেব্রা ক্রসিং, সিগন্যাল বাতি কিছুই নেই। ফলে একটু ফাঁকা পেলেই ব্যস্ত মহাসড়ক দৌড়ে পার হওয়ার চেষ্টা করে পথচারীরা। এ অবস্থায় দ্রুতগতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে অনেক চালককে হিমশিম খেতে দেখা গেছে।

কাজলা পেট্রলপাম্প এলাকায় কাজ শেষে মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে কুতুবখালীর বাসায় ফিরছিলেন আউয়াল মিয়া। তিনি বলেন, পেট্রলপাম্পের পেছনেই তাঁর পৈতৃক বাড়ি। এখানে তাঁর মা-বাবা থাকেন। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কুতুবখালীতে থাকেন। ফলে দিনে এক-দুবার তাঁকে ঝুঁকি নিয়ে এই মহাসড়ক পার হতে হয়। এখানে একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ করলে এ এলাকার মানুষ খুবই উপকৃত হবে।

মৌমিতা পরিবহনের প্রায় প্রতিটি বাস কাজলা এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করে। এই পরিবহনের চালক মো. জিল্লু বলেন, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠা–নামার সময় যানবাহনগুলোর গতি অনেক বেশি থাকে। অথচ এই দ্রুতগতির পথ দিয়েই রাস্তা পারাপার হয় পথচারীরা। এতে অনেক সময় গাড়ির নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব হয় না। আবার অনেক যাত্রী বাসের সামনে দিয়েই সড়ক পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে। ফলে পেছন দিক থেকে আসা বাসের ধাক্কা লাগার আশঙ্কা থাকে। অথচ কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে একচেটিয়াভাবে যানবাহনের চালকদেরই দায়ী করা হয়। অনেকাংশেই এই দুর্ঘটনার জন্য পথচারী দায়ী।

কাজলার একটি বড় অংশ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ বলেন, কাজলায় একটি পদচারী-সেতু নির্মাণ এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সবাই নিরাপদে সড়ক পার হতে চায়। বিষয়টি ডিএসসিসির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শিগগিরই জানানো হবে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কাজলায় একটি পদচারী-সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কাজ অনেকটা এগিয়েছে।