চিকিৎসক-সংকটে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসক–সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৫০টি। বর্তমানে ১৯ জন চিকিৎসক কর্মরত। এর মধ্যে গড়ে ৪-৫ জন প্রশিক্ষণ ও ছুটিতে থাকেন। ফলে প্রতিদিন ১৪-১৫ জন চিকিৎসক দিয়ে সেবা কার্যক্রম চলছে।

চিকিৎসক–সংকটে যথাযথ সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। বাধ্য হয়ে অনেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও জেলার বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়ছে গরিব মানুষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১০০ শয্যার হাসপাতালটিতে সব সময়ই ১৫০ থেকে ২০০ রোগী ভর্তি থাকে। আর প্রতিদিন বহির্বিভাগে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। এত রোগীর চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।

ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে ৬ একর জমির ওপর ১৯৮৫ সালে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। ২০০৩ সালে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতালের চক্ষু, গাইনি, অ্যানেসথেসিয়া, নাক কান ও গলা, মেডিসিন, শিশু জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ এবং মেডিসিন, নাক কান ও গলা, প্যাথলজি, শিশু, চক্ষুর কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ পদ শূন্য। এ ছাড়া দন্ত্য চিকিৎসক, জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ও ১৩ জন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে।

জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিনই হাসপাতালে রোগীর চাপ থাকে। গড়ে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ রোগী চিকিৎসা নেয়। এত কম চিকিৎসক দিয়ে আমরা সামাল দিতে পারছি না। যখনই রোগীদের ভিড় বেশি থাকে, তখনই সেবার মান নিম্নমুখী হয়। প্রতিদিনের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবা ছাড়াও অস্ত্রোপচার করতে হয়। প্রায় সময়ই ময়নাতদন্ত থাকে।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের স্বপন কুমার গত ৩১ মার্চ এসেছিলেন চোখের চিকিৎসকের কাছে। বহির্বিভাগে টিকিট সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, এই হাসপাতালে প্রায় ১০ বছর ধরে চোখের চিকিৎসক নেই। হতাশ হয়ে তিনি পাশের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যান। কিন্তু সেখানকার চিকিৎসাসেবা তাঁর পছন্দ হয়নি। হতাশ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।

স্বপন কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাম থেকে শহরে আসি ডাক্তার দেখাতে। এসে তাঁদের পাই না। একটি হাসপাতালে ১০ বছর ধরে চোখের চিকিৎসক নেই, এটা কীভাবে সম্ভব? জেলার লাখ লাখ গরিব মানুষ কোথায় যাবে?’

গত ৩১ মার্চ গোসাইরহাটের বাসুদেবচাপ গ্রাম থেকে সদর হাসপাতালে এসেছেন গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি এক সপ্তাহ ধরে কানের ব্যথায় ভুগছেন। হাসপাতালে এসে জানতে পারেন নাক কান ও গলার চিকিৎসক ছয় মাস ধরে নেই। পাশের একটি ক্লিনিকে যান। সেখানে গিয়েও কোনো চিকিৎসক পাননি। বাধ্য হয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।

গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা কেমন জেলায় বসবাস করছি, সেখানে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় না। এখানকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তারাও এ সংকট দূর করার জন্য কাজ করছেন না। আমাদের মতো গরিব মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর হাসপাতালের এক চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমনিতে চিকিৎসক–সংকট, তার মধ্যে অনেকে নিয়মিত সময়মতো আসেন না। বিভিন্ন অজুহাতে তাঁরা হাসপাতালের বাইরে কাটান। আমাদের মতো সহজ-সরল চিকিৎসকদের দিন–রাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে।’

সিভিল সার্জন খলিলুর রহমান বলেন, ১০০ শয্যার একটি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক ৫০ জন চিকিৎসক থাকলে সেবার মান ভালো রাখা যায়। কোনো অবস্থাতেই ১৪-১৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চালানো যায় না। চিকিৎসক–সংকটের বিষয়টি প্রতি মাসে চিঠি দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।