৫৬৫ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক একজন

কুমিল্লার বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক একাদশ ও দ্বাদশ এবং স্নাতক পাস ও সম্মান শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ৫৬৫ জন। তাঁদের পাঠদানের জন্য শিক্ষক মাত্র একজন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী ৫৬৭ জন। তাঁদের শিক্ষকও একজন। এই অবস্থা শুধু ওই দুই বিভাগে নয়; কলেজটির বেশির ভাগ বিভাগই শিক্ষকসংকটে ধুঁকছে। এতে এসব বিভাগে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সংকট স্নাতক সম্মান চালু হওয়া চারটি বিভাগে। সমাজকর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া বাকি দুটি বিভাগ হলো অর্থনীতি ও হিসাববিদ্যা। এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগে ৪৫৩ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন দুজন শিক্ষক। হিসাববিদ্যা বিভাগেও ৫৬৫ জনের বিপরীতে শিক্ষক দুজন।

কলেজ সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে এ কলেজে ২ হাজার ৪৬৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। তাঁদের পাঠদানের জন্য শিক্ষকের পদ রয়েছে অধ্যক্ষসহ ২৯টি। এর মধ্যে শিক্ষকের ১২টি পদ শূন্য রয়েছে।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় এবং নতুন করে পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে এ কলেজে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। তার ওপর কলেজে খণ্ডকালীন শিক্ষক নেই। এই অবস্থায় প্রত্যাশিত পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

কলেজের তিনজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ১৯৮৫ সালে কলেজ জাতীয়করণের পর এখানে শিক্ষকের নতুন পদ সৃষ্টি হয়নি। ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে চারটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। তাই এখন পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণে ক্লাস চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কলেজের উপাধ্যক্ষের পদ সৃষ্টি হয়নি। কৃষিবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিষয় থাকলেও এসব বিষয়ের কোনো শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি।

কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭২ সালের ১ জুলাই ৬ দশমিক ৪১ একর জায়গা নিয়ে বরুড়া শহীদ স্মৃতি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই কলেজটি সরকারি হয়। এরপর এ কলেজের নামকরণ করা হয় বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ। এ কলেজে চারটি বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্স রয়েছে। এর মধ্যে সমাজকর্ম বিভাগে শিক্ষকের তিনটি পদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের একটি করে পদ শূন্য। একমাত্র প্রভাষক পুরো বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে তিনটি পদের মধ্যে প্রভাষকের দুটি পদ শূন্য। একমাত্র সহকারী অধ্যাপক রয়েছেন। হিসাববিদ্যা বিভাগে তিনটি পদের মধ্যে প্রভাষকের একটি পদ শূন্য। অর্থনীতি বিভাগে তিনটি পদের মধ্যে প্রভাষকের একটি পদ ও সহকারী অধ্যাপকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। এই বিভাগে সংযুক্ত হিসেবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত একজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। বাংলা বিষয়ে প্রভাষকের একটি, ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনটি পদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকের একটি পদ শূন্য। রসায়ন বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের একটি ও গণিতে প্রভাষকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। কর্মচারীদের ১১টি পদের মধ্যে পাঁচটি পদ শূন্য। চলতি বছরের ৩০ জুন কলেজের প্রধান সহকারী জয়নাল আবেদীন অবসরে যাবেন। তখন আরও একটি পদ শূন্য হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দুজন শিক্ষার্থী বলেন, তাঁদের বিভাগে প্রতিদিন ক্লাস হয় না। শিক্ষক না থাকার কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। দ্রুত আরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দরকার।

কলেজটির অধ্যক্ষ শিবতোষ নাথ বলেন, ‘প্রতি মাসেই আমরা শূন্যপদের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠাই। শিক্ষকসংকটের কারণে পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ আয় কম থাকায় খণ্ডকালীন শিক্ষকও রাখা যাচ্ছে না। অনার্স কোর্স আছে, কিন্তু এক-দুজন দিয়ে পড়ানো হয়। এতে করে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শূন্যপদ পূরণ ও নতুন করে শিক্ষকের পদ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কুমিল্লা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক আবুল খায়ের মুন্সী বলেন, উপজেলা পর্যায়ের প্রধান কলেজ এটি। এখানে জনবলসংকটের বিষয়টি অধিদপ্তরকে জানানো হবে। কলেজ থেকে প্রতি মাসেই লোকবলের বিষয়ে জানানো হয়।