'সোহেল কই গেলি, আমার কী হইবো রে?'

ফায়ারম্যান সোহেল রানা
ফায়ারম্যান সোহেল রানা

ফায়ারম্যান সোহেল রানা ছিলেন পুরো পরিবারের ভরসা। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। একই সঙ্গে পরিবার পড়েছে অনিশ্চয়তায়।

বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন নেভাতে গিয়ে গুরুতর আহত হন ফায়ারম্যান সোহেল। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রোববার দিবাগত রাতে সোহেল মারা যান।

সোহেলের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের কেরালা গ্রামে। আজ সোমবার সকাল ছয়টার দিকে পরিবারের সদস্যরা সোহেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন। সোহেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকেই পরিবারে চলছে মাতম।

সকাল ১০টার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় সোহেলের চাচাতো ভাই শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। শহিদুল যখন ফোনে কথা বলছিলেন, তখন এক নারীর আহাজারি করে কান্না করার শব্দ শোনা যাচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, ‘আমার সোহেল কই গেলি? তোরে কই পামু? আমার কী হইবো রে? '

শহিদুল জানালেন, সোহেলকে হারিয়ে তাঁর মা হালিমা আক্তার আহাজারি করছেন।

সোহেলের বাবা নুরুল ইসলাম (৬৫) পেশায় কৃষক। বয়সের ভারে তিনি এখন আর কৃষিকাজ করতে পারেন না।

নুরুলের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সোহেল দ্বিতীয়। মেয়ে বড়। তাঁর বিয়ে হয়ে গেছে।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন সোহেল। তাঁর রোজগারেই চলে আসছিল পুরো পরিবার। ছোট তিন ভাই রুবেল হোসেন, উজ্জ্বল হোসেন ও দেলোয়ার হোসেনের পড়া-লেখার খরচও জোগাতেন সোহেল। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পরিবার অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে বলে জানান শহিদুল।

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সিঙ্গাপুরে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোহেলের মরদেহ দেশে ফেরত আনা হবে।

ঢাকার কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনে ফায়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন সোহেল। গত ২৮ মার্চ এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকাজে যোগ দেন সোহেল।

ফায়ার সার্ভিসের উঁচু ল্যাডারে (মই) উঠে এফ আর টাওয়ারের আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজ করছিলেন সোহেল। একপর্যায়ে তাঁর শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়। তিনি মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন। সেখানে আঘাতে তাঁর একটি পা ভেঙে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দেশে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোহেলের অবস্থা অপরিবর্তিত থাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শুক্রবার তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছিল।

এফ আর টাওয়ারে আগুনের ঘটনায় সোহেলসহ ২৭ জনের মৃত্যু হলো। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।