বর্ষবরণ উৎসব রাঙাতে ব্যস্ততা

মুখোশ বানাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শনিবার তোলা ছবি।  প্রথম আলো
মুখোশ বানাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। শনিবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

তুলির শেষ আঁচড় দিয়ে রঙিন সরাটিকে শুকাতে দিয়েছে ফারিহা। পাশেই তৈরি মুখোশ, সেগুলো রাঙিয়ে তুলতে ব্যস্ত আরও কয়েকজন। কলেজ প্রাঙ্গণে কাঠ আর বেত দিয়ে তৈরি হচ্ছে মস্ত এক হাতি। শেষ সময়ে এসে বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে এভাবেই সরগরম হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট।

মঙ্গল শোভাযাত্রা, বৈশাখী মেলাসহ নানান আয়োজনে বাংলা ১৪২৬ সনকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ। বৈশাখের লাল–সাদা পোশাকে সেজেছে বিপণিবিতানগুলো। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। গত রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটে দেখা যায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন বছরকে রাঙিয়ে তোলার ব্যস্ততা। তৈরি মুখোশে উঠে এসেছে লক্ষ্মীপ্যাঁচা, বাঘসহ বাঙালি লোকসংস্কৃতির অংশ রূপকথার বিভিন্ন রাজা-রানির অবয়ব। তৈরি হচ্ছে প্রাণীদের প্রতিকৃতি। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে রাঙিয়ে তুলতেই এসব আয়োজন বলে জানান চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শিল্পী সামছুল আলম। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রায় হাতিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মঙ্গল শোভাযাত্রা গবেষণা ও প্রসার কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী শহীদ আহমেদ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলেই যে সেটা ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করতে হয় না, হাতি আমাদের সেই শিক্ষাটুকু দেয়। আমরা চাই, সমাজে ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করে শ্রেণি–ধর্ম-বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠন করতে।’

১৯৭৭ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জে মঙ্গল শোভাযাত্রা চালু হলেও ১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। এবারের প্রস্তুতি নিয়ে জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ বছর চার দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসব হবে। বৈশাখের প্রথম প্রহরে প্রভাতি অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন সূর্যকে বরণ করার পর সকাল নয়টায় নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে। জোটভুক্ত ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠন ইতিমধ্যে উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে জানান তিনি।

বাংলা ১১৭৩ সাল থেকে নিয়মিত বৈশাখী মেলার আয়োজন করে আসছে দেওভোগ শ্রীশ্রী রাজা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ বিগ্রহ মন্দির। সোমবার সকালে মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হচ্ছে নাগরদোলা, চলছে দোকান তৈরির কাজ। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর চন্দ্র সাহা বলেন, বৈশাখী মেলাটির ইতিহাস প্রায় আড়াই শ বছরের। এ বছরও বৈশাখের শুরুর দিন থেকে শুরু হয়ে মাসজুড়ে চলবে মেলা। বর্ষবরণে এবার কিছুটা ব্যতিক্রমী আয়োজন করছে নারায়ণগঞ্জ সুধীজন পাঠাগার। ১ বৈশাখ বিকেলে বৈশাখী আড্ডা ছাড়াও থাকছে পুরস্কার বিতরণী, জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের সম্মাননা প্রদান ও পুঁথিপাঠ।

শিশুদের পোশাক তৈরি ও পাইকারি বিক্রির জন্য বিখ্যাত দেওভোগ সোহরাওয়ার্দী মার্কেট। দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল দেওয়ান বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বৈশাখের বিক্রি কিছুটা কম।

বৈশাখী উৎসবকে নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম। তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের হুমকি না থাকা সত্ত্বেও আমরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। সন্ধ্যার মধ্যেই বৈশাখের সব অনুষ্ঠান শেষ করতে আমরা আয়োজকদের অনুরোধ করব।’