মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল ভাবনা 'নদী'

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি।  প্রথম আলো
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। প্রথম আলো

নদীমাতৃক বাংলাদেশের হারানো ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে বিপন্ন নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদী রক্ষায় সচেতনতার প্রয়াসে শামিল হচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ‘বাঁচলে নদী বাঁচবে দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে এ বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল ভাবনা নির্ধারণ করা হয়েছে নদী।

আর মুখোশের পরিবর্তে এবার মাছের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হবে। পাশাপাশি থাকবে বেজি, শুশুক, বজরা, ডিঙি, ময়ূরপঙ্খী নৌকা ও নৌকাবাইচের দৃশ্য।

বর্ষবরণের এ আয়োজনকে সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে বিভাগীয় শ্রেণিকক্ষ ও নতুন ভবনের নিচতলায় দুই ভাগে ভাগ হয়ে তাঁরা কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদেরও আগ্রহের কমতি নেই। সহপাঠী, বিভাগের শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাচের সব শিক্ষার্থী একসঙ্গে আনন্দ, আড্ডা আর গল্পের সঙ্গে কাজ করে চলছেন।

আয়োজকেরা বলেন, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বুড়িগঙ্গার সেই স্বচ্ছ পানির প্রবাহ, পাল তোলা নৌকা আর মাছ যেমন হারিয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। তেমনি নদীকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা এ দ্বীপের মানুষের নদী দখল ও নিয়মিত দূষণে হারিয়ে গেছে অনেক নদী। সরকার সম্প্রতি নদীকে অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সঙ্গে দেশবাসীকে আবার তাদের ঐতিহ্য সচেতন করার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

চারুকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসাইন বলেন, ‘আমরা নদীর প্রতিচ্ছবি তুলে ধরার জন্য বিভাগের সবাই মিলে কাজ করছি। এই কাজের মাধ্যমে আমরা অনেক ব্যতিক্রমী কাজ শিখতে পারছি।’এর মধ্যে মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্ধেক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানান তিনি।

চারুকলা বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলপ্তগীন বলেন, ‘আমরা এ বছর বৈশাখ উৎসবে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ করছি।’

বর্ষবরণে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকছে দিনব্যাপী নানা আয়োজন। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার পর আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা থাকছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা ও বিভিন্ন আন্দোলনে মূল স্লোগান ছিল “তোমার আমার
ঠিকানা/ পদ্মা, মেঘনা, যমুনা”। আমরা জন্মসূত্রে নদীমাতৃক আর স্বাধীনতার যে ঠিকানা ব্যবহার করেছি, তা–ও নদী। তাই আমাদের নিজেদের জন্য নদী বাঁচাতে হবে। গণসচেতনার জন্যই এ বছর নদীকে প্রধান প্রতিপাদ্য করা হয়েছে।’