নৈতিক স্খলনের কারণে রেজিস্ট্রার চাকরিচ্যুত

নৈতিক স্খলনের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মনিরুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি আজ বুধবার প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির এক অফিস সহকারী (অস্থায়ী) নারীকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ ওঠে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রারের বিচার চেয়ে উপাচার্যের কাছে একটি লিখিত আবেদন করা হয়।

শিক্ষক সমিতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য বিষয়টি তদন্তের জন্য সিন্ডিকেটের তিন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির তদন্তে মনিরুলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রমাণ মেলে। সিন্ডিকেট সভা থেকে মনিরুল ইসলামকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু সিন্ডিকেট সভার ওই সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজের পদ আঁকড়ে রাখার জন্য রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম ছুটিতে যান। পরে গত ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অপর এক সভায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন মো. হাসিনুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বর্তমানে হাসিনুর রহমান ওই দায়িত্বে আছেন।

সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন করলে আদালত তাঁর সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত করেন। এরপর তিনি স্থগিতাদেশ নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি তাঁর পদে যোগদান করতে এলে উপাচার্য তা গ্রহণ করেননি। এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মনিরুল ইসলামের করা রিট আবেদনের স্থগিতাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করলে উচ্চ আদালত আদেশটি স্থগিত করেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল রাতে ঢাকার সেগুনবাগিচায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ কার্যালয়ে সিন্ডিকেটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলামকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা মৌখিকভাবে শুনেছি। তবে কোনো কাগজ হাতে পাইনি। এই সিদ্ধান্ত বিধিবহির্ভূত এবং অন্যায়ভাবে নেওয়া হয়েছে। আমাকে সাময়িক বরখাস্তের পর উচ্চ আদালত তা স্থগিত করেছিলেন। আমি স্থগিতাদেশ নিয়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে গেলে উপাচার্য আমাকে যোগদান করতে দেননি। সিন্ডিকেটের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমি উচ্চ আদালতে যাব এবং আইনি লড়াই চালাব।’ তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক বলে তিনি মন্তব্য করেন।