বাগমারায় চোর সন্দেহে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে বৃদ্ধকে হত্যা

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী

রাজশাহীর বাগমারায় চোর সন্দেহে এক ব্যক্তিকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে ছয় ঘণ্টা নির্যাতন চালিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তির নাম ইব্রাহিম হোসেন (৬০)। তিনি নওগাঁর আত্রাই উপজেলার গণ্ড-গোহালী গ্রামের বাসিন্দা।

বুধবার বিকেলে বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়নের কালাপাড়া গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ইব্রাহিম একই ইউনিয়নের কামারবাড়ি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ২০ বছর ধরে বসবাস করছিলেন। এই ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তিরা হলেন কালাপাড়ার মঞ্জুর হোসেন (৩৫) ও মুঞ্জুর রহমান (৩০)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, গরুচোর সন্দেহে বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঘর থেকে ইব্রাহিমকে পার্শ্ববর্তী কালাপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান নিজবাড়িতে ধরে নিয়ে যান। এ সময় ইব্রাহিমের স্ত্রী-সন্তানেরা বাধা দিলে তাঁদেরও মারধর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আতিকুরের (৪৫) বাড়ি থেকে গরু চুরি যায়। ইব্রাহিমকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আতিকুর গরুর বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু ইব্রাহিম জানান তিনি গরু চুরির সঙ্গে জড়িত নন। এতে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য আতিকুর ও তাঁর লোকজন হাত-পা বেঁধে লোহার রড ও লাঠি দিয়ে ইব্রাহিমকে পেটাতে থাকেন। থেমে থেমে বেলা তিনটা পর্যন্ত ইব্রাহিমকে পেটানো হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়েন ইব্রাহিম।

বুধবার বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নিহত ব্যক্তির শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পান এই প্রতিবেদক। চিকিৎসক হাসান জানিয়েছেন, ইব্রাহিমকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। পাঁচ থেকে সাত মিনিট চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি মারা যান। নিহত ব্যক্তির কোমরের নিচের দিকে অসংখ্য আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। তিনি জানান, হাসপাতালে রেখে যাওয়ার সময়ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইব্রাহিমকে জুতা দিয়ে পেটান।

ইব্রাহিমের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, খবর পেয়ে তিনি স্বামীকে উদ্ধারের জন্য ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে একটি ভ্যানে করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইব্রাহিমকে রেখে যায় নির্যাতনকারীরা।

ইব্রাহিমের স্ত্রী রেশমা খাতুন অভিযোগ করেন, স্বামীকে অপহরণের পর থানায় জানানো হলেও পুলিশ ইব্রাহিমকে উদ্ধারে কোনো ভূমিকা রাখেনি। তাঁর ধারণা, পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাঁর স্বামীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। তাঁর দাবি, ইব্রাহিমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, যেভাবে তাঁর স্বামীর ওপর নির্যাতন চালিয়েছে, তা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

স্থানীয় মাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আসলাম আলী বলেন, ইব্রাহিমকে ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো ঠিক হয়নি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়াও উচিত হয়নি।

এ বিষয়ে বিকেলে মুঠোফোনে আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইব্রাহিমকে গরুচোর সন্দেহে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ইব্রাহিম তাঁর গরু চুরির কথা স্বীকার করার পর ক্ষুব্ধ লোকজন মারধর করেছে। পুলিশে না দিয়ে তিনি কেন নির্যাতন করলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, থানার ওসি চোরকে ধরার কথা বলেছেন। তবে গরু চুরির বিষয়ে থানায় কোনো মামলা বা লিখিত অভিযোগ দেননি বলে স্বীকার করেন তিনি।

বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহম্মেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পুলিশ বরাবরই চোর বা কোনো অপরাধীকে ধরে পুলিশে খবর দেওয়ার কথা বলে থাকে। কাউকে নির্যাতন বা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলা হয়নি বা হয় না। নিজেকে রক্ষার জন্য আতিকুর রহমান পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন বলে তিনি জানান। পুলিশ মামলা নিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ইব্রাহিমের স্ত্রীর অভিযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই তাঁকে লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছে।

থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুজনকে আটক করা হয়েছে (বুধবার রাত ১১টা)। নিহত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।