অভিজিৎ হত্যা মামলায় মেজর জিয়াসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ, ১৫ জনকে অব্যাহতি

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুজিবর রহমান অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্ত শেষে ১৫ জনের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা আদালতে জমা দেন এবং বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। আদালত তা গ্রহণ করে ১৫ জনকে অব্যাহতির আদেশ দেন।

সৈয়দ জিয়াউলসহ অভিযোগপত্রভুক্ত অপর জঙ্গিরা হলেন আরাফাত রহমান ওরফে শামস ওরফে সাজ্জাদ, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক ওরফে সোহেল ওরফে সাকিব, আকরাম হোসেন আবির ওরফে আদনান ও শফিউর রহমান ফারাবী। এঁদের মধ্যে মেজর জিয়াউল ও আকরাম পলাতক।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অমর একুশে গ্রন্থমেলা চলাকালে ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে খুন হওয়ার দিন ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিসিটিভির(ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সামরিক প্রশিক্ষক শরিফুল, শারীরিক প্রশিক্ষক সেলিম, সাজ্জাদসহ আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সাত-আটজনকে দেখা যায়। তাঁরা বইমেলায় ঢোকা এবং সেখান থেকে বের হওয়া পর্যন্ত অভিজিৎ রায়ের গতিবিধি অনুসরণ করেন। সায়মন, সোহেল ও আরাফাত গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁরা অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যার দুদিন আগে থেকে সায়মন, সোহেল, আকরাম ও হাসান অভিজিৎ রায়ের গতিবিধি অনুসরণ করেন। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে আরাফাত, খলিল ওরফে আলী, অন্তু ও অনিক হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, এ সময় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া, শরীরচর্চা প্রশিক্ষক সেলিম ঘটনাস্থল ঘিরে রাখেন, যাতে তাঁদের সহযোগীদের কেউ আটক করতে না পারেন। হত্যাকাণ্ডের পর তাঁরা ঘটনাস্থলে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি ফেলে পালিয়ে যান। অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তিনিও আহত হন।

মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আসামিরা হলেন সাদেক আলী মিঠু, মোহাম্মদ তৌহিদুর রহমান, আমিনুল মল্লিক, জাফরান হাসান, জুলহাস বিশ্বাস, আবদুর সবুর রাজু সাদ, মাইনুল হাসান শামীম, মান্না ইয়াহিয়া মান্নান রাহি, আবুল বাশার, মকুল রানা, সেলিম, হাসান, আলী খলিল, অনিক ও অন্তু। এঁদের মধ্যে মান্না ইয়াহিয়া ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। আনসার আল ইসলামের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির প্রধান ও সামরিক প্রশিক্ষক মুকুল রানা শরিফুল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। বাকিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিদের নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে তাঁদের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কাছে দুর্বৃত্তরা অভিজিৎ রায়কে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। হামলায় তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা গুরুতর আহত হন। তাঁরা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন। অভিজিৎ যুক্তরাষ্ট্রে সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছিলেন, রাফিদা আহমেদ চিকিৎসক। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় করা হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরে মামলার তদন্তভার ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগে (সিটি) ন্যস্ত করা হয়।