যাঁর ভবন তাঁকেই নিরাপদ রাখতে হবে: মেয়র আতিকুল

অসীম সাহসী ১০ অগ্নি যোদ্ধাকে সম্মাননা দিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ঢাকা, ১১ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন
অসীম সাহসী ১০ অগ্নি যোদ্ধাকে সম্মাননা দিল বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। ঢাকা, ১১ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন

ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বেশি মুনাফার আশায় আর মৃত্যুকূপ বানাবেন না। যাঁর ভবন তাঁকে নিরাপদ রাখতে হবে। বদল আনতে হবে মানসিকতায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক আয়োজিত ‘অগ্নি যোদ্ধাদের সম্মাননা’ অনুষ্ঠানের আলোচনায় অংশ নিয়ে মেয়র এসব কথা বলেন। অগ্নি যোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সম্মাননা জানাতে আজ বৃহস্পতিবার কাকরাইলের ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ভবন মিলনায়তনে এই আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সময় অগ্নিকাণ্ড থেকে রক্ষা পাওয়া ব্যক্তিরা ফুলের তোড়া ও সম্মাননাপত্র তুলে দেন ফায়ার সার্ভিসের ১০ জন কর্মীর হাতে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ।

অগ্নি যোদ্ধাদের বীর পুরুষ আখ্যায়িত করে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, বহুতল ভবন, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়, বাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে। ইতিমধ্যে গার্মেন্টসে ফ্যাক্টরিগুলো নিজস্ব আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। সস্তার তিন অবস্থা—ভুলে গেলে চলবে না মন্তব্য করে মেয়র বলেন, যেনতেনভাবে বানানো ভবনে ভাড়াটে হিসেবে উঠবেন না। সিঁড়ির মধ্যে রান্না করা বন্ধ করতে হবে। মেয়র জানান, শিগগিরই নগর অ্যাপস চালু হচ্ছে। নাগরিকেরা সেই অ্যাপসের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগকারী বা তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে।

সম্মাননা অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন (ডান থেকে তৃতীয়), পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ (ডান থেকে চতুর্থ), পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান (বাঁয়ে) ও ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ (ডানে)। ঢাকা, ১১ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন
সম্মাননা অনুষ্ঠানে মেয়র আতিকুল ইসলামসহ ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন (ডান থেকে তৃতীয়), পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ (ডান থেকে চতুর্থ), পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান (বাঁয়ে) ও ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক আসিফ সালেহ (ডানে)। ঢাকা, ১১ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন

সবাইকে আইন মানার আহ্বান জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, ‘আমাদের কাজটা আমাদের করতে দেন। কাজের সুযোগ করে দেবেন। একটু সচেতন হলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন আগুনযোদ্ধারা।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব, অযথা ভিড় করে কাজে বিঘ্ন ঘটাবেন না। সবার আগে ভূমিকা রাখতে হবে স্থানীয় জনগণকে। সহযোগিতা পেলে আমরা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারব।’

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বহুতল ভবন থাকলে আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। বহুতল ভবনে আগুন লাগলে তা সঙ্গে সঙ্গে জানানোর জন্য ব্যবস্থা থাকতে হবে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। মেজর শাকিল জানান, এফ আর টাওয়ারের তাপরোধী সিঁড়ি থাকলে কেউ মারা যেতেন না।

আগুনযোদ্ধাদের সবাই প্রশিক্ষিত জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান বলেন, যাঁর যাঁর এলাকার ফায়ার স্টেশনের নম্বর সংগ্রহে রাখুন। আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসকে জানান।

সম্মাননা পাওয়া ১০ জন হলেন ফায়ারম্যান সোহাগ চন্দ্র কর্মকার, বিষ্ণুপদ মিস্ত্রি, জাকির হোসেন, কাজী সোহাগ, শহীদুল ইসলাম, জুয়েল মাহমুদ, মফিজুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, নাজির হোসেন ও মোক্তার হোসেন। সম্প্রতি এফ আর টাওয়ারে আগুনের সময় উদ্ধারকাজ চলাকালীন আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে প্রাণ হারানো ফায়ারম্যান সোহেল রানার  পরিবারকে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে চার লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। আরও তিন লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ট্রাস্টের তহবিলে।