আবু সিনা ছাত্রাবাস সংরক্ষণের দাবি বাপার

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস। ছবি: সংগৃহীত
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আবু সিনা ছাত্রাবাস। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ‘আবু সিনা ছাত্রাবাস ভবন’ যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংগঠন দুটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে ভবনটি (আবু সিনা ছাত্রাবাস) নিয়ে করা গবেষণাপত্রের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৌশিক সাহা।

বাপার সহসভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, রাশেদা কে চৌধূরীর সভাপতিত্বে এবং বাপার যুগ্ম সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (আইএবি) সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সদ্য সাবেক সভাপতি সি এম তোফায়েল সামী, সিলেটের ঐতিহ্য রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজের মুখপাত্র ও প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষক মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার, বাপা সিলেট শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম কিম প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা আবু সিনা ছাত্রাবাস ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগকে নিন্দা জানান। এবং অবিলম্বে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে এই প্রাচীন ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কথা বলার জন্য আমরা এখানে এসেছি। আমি মনে করি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ভবনটি ধ্বংস না করেও সরকার অন্য স্থানে হাসপাতাল করতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এ প্রকল্প বাতিল করলে টাকা চলে যাবে। এটা একটা নিছক অজুহাত। তাদের মনে রাখা দরকার, টাকা ফেরত গেলে টাকা পাওয়া যাবে কিন্তু ঐতিহ্য ধ্বংস হলে তা আর ফেরত পাওয়া যাবে না। তাঁর অভিযোগ, এই মহামূল্য সম্পদ একটা স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক।

আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, একটা পরিবার যেমন অন্যের চেপে দেওয়া নকশায় নিজের ভবনের পরিবর্তন মেনে নিতে পারে না, ঠিক তেমনি সিলেটবাসী তাদের এই ঐতিহ্যকে ধ্বংস হতে দিতে পারে না। তিনি বলেন, এটা ভেঙে নতুন ভবন তৈরি না করে বরং এটাকে সংরক্ষণ করে হাসপাতালের ছাত্রাবাস বা অন্য কাজে ব্যবহার করলে এটা যেমন সংরক্ষিত থাকে, অন্যদিকে খরচ বেঁচে যাবে।

আবু সিনা ছাত্রাবাস সংরক্ষণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত
আবু সিনা ছাত্রাবাস সংরক্ষণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

কৌশিক সাহা বলেন, ঐতিহ্য সংরক্ষণ উন্নয়নের একটা বাধা হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু উন্নয়নের পথে ঐতিহ্য বড় বাধা নয়। তাদের চিন্তা–চেতনায় সমস্যা। তিনি আরও বলেন, এই ভবনটি ১৮৫০ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে তৈরি হয়েছিল। এই ভবনটি অনেক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী। শহীদ ডা. শামসুদ্দীন আহমেদসহ আরও অনেককে ১৯৭১ সালে এই ভবনে হত্যা করা হয়।

মোস্তফা শাহ জামান চৌধুরী বাহার বলেন, ‘আমরা সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরামর্শে একটা জায়গা দেখেছি, যেটা অনেক ভালো জায়গা। সেখানে হাসপাতাল করলে আমাদের সিলেটের ঐতিহ্যটি রক্ষা পাবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ এটাকে ধ্বংস না কারে এটাকে সংরক্ষণ করুন।’

সি এম তোফায়েল সামী বলেন, ‘কোনো দেশের কালচারকে ধ্বংস করা যাবে না। কোন দেশকে জানতে হলে সে দেশের জাদুঘরে যেতে হয়। আমরা হাসপাতালও চাই কিন্তু ঐতিহ্যকে ধ্বংস করে নয়। বরং এটাকে সংরক্ষণ করুন।’

যথাযথভাবে সংস্কার করে আবু সিনা ছাত্রাবাসকে প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্তির দাবি জানান শরীফ জামিল। বিজ্ঞপ্তি।