চুড়িহাট্টার ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াহেদ ম্যানশনের কী হবে?

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের চারপাশে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনের চারপাশে পলেস্তারা খসে পড়ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

অগ্নিকাণ্ডের প্রায় দুই মাস পরও চকবাজারের চুড়িহাট্টার ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াহেদ ম্যানশন ভবনটি ভাঙা হয়নি। ভবনটি সংস্কারেরও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ভবনের চারপাশে পলেস্তারা খসে পড়ছে। ফের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এর মধ্যে ওয়াহেদ ম্যানশনে লাগানো ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ডটি কে বা কারা সরিয়ে ফেলেছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি চকবাজারের চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায় রাসায়নিক গুদাম থেকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৭১ জন মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বা নিয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক।

এ ঘটনার পরদিন ওয়াহেদ ম্যানশনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবন’ লেখা সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর কয়েক দিন পর এই ভবন ভেঙে ফেলার সুপারিশ করে ডিএসসিসিসহ সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্স।

কিন্তু কোন সংস্থা, কবে ভবনটি ভাঙবে সেই সংক্রান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে।

ডিএসসিসি বলছে, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অর্থাৎ বসবাসের অনুপযোগী। কিন্তু ভবনটি এখনই ধসে পড়ার আশঙ্কা নেই। তবে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই দিন ওয়াহেদ ম্যানশনের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। আগুনে পুড়ে ভবনটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, চুড়িহাট্টা মোড়ে চারতলা ওয়াহেদ ম্যানশনের চারপাশের দেয়াল ও ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। ভবনটির পশ্চিম ও উত্তর পাশের দুটি গলি দিয়ে রিকশা, ভ্যান চলছে।

ভবনটির দেয়ালে ঝুঁকিপূর্ণ লেখা সাইনবোর্ড দেখা যায়নি। শুধু এই দিন অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে টানানো কয়েকটি ব্যানার ঝুলছে।

চুড়িহাট্টা মোড় দিয়ে হেঁটে নন্দ কুমার দত্ত রোডের বাসায় যাচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন। আলাপকালে তিনি বলেন, আগুনে ওয়াহেদ ম্যানশনটির ভগ্নদশা। চলার পথে ভবনটির দিকে চোখ গেলে সবার মন ভয়ে আঁতকে ওঠে।

ভবনটির কয়েকটি স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ার উপক্রম থাকায় মহল্লার মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। কয়েক দিন আগে সকালে পশ্চিম পাশে পলেস্তারা খসে পড়ছে। কিন্তু রাস্তা ফাঁকা থাকায় কেউ হতাহত হয়নি। অবিলম্বে ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। এর মধ্যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেবা সংস্থাগুলোকেই তার দায় নিতে হবে।

রাজউকের (জোন-৫) অথরাইজড অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নুরুজ্জামান হোসেন জাহির বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশন যদি ভাঙতে হয়, তা ডিএসসিসিই ভাঙবে।

তবে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এ দুর্ঘটনার পরপরই ভবনটিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছিল। এখন ভবনটিতে কেউ বাস করে না। আর ভবনটি ব্যক্তিমালিকানাধীন। তারাই নিজেদের সময়মতো ভেঙে ফেলবে। ডিএসসিসির সহযোগিতা লাগলে তা করা হবে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক মো. সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, তাঁরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।