বীজ সংরক্ষণে কার্যকর পদ্ধতি 'ইরি কোকুন'

কৃষিজমিতে ভালো ফলন বাড়াতে হলে চাই মানসম্মত বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ। এই দুটো কাজ নিয়ে কৃষককে কমবেশি দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। তবে বীজ সংরক্ষণ করার অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ‘ইরি কোকুন’ কৃষকদের সেই দুশ্চিন্তা কমিয়ে দিয়েছে। কৃষকেরা এখন ইরি কোকুনে বীজ সংরক্ষণ করে লাভজনক হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কালকিনি উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম’ (এনএপিটি) প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বীজ সংরক্ষণের জন্য ফিলিপাইন থেকে আনা হয় ইরি কোকুন। এটি দেখতে সাদা রঙের একটি বড় বস্তার মতো। বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বস্তাটি তৈরি করা হয়েছে। একটি ইরি কোকুনে ৩০ জন কৃষক ২৭ মণ বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। এর ফলে বীজ সংরক্ষণে কৃষকের আর কোনো ঝামেলায় পড়তে হবে না। এই বস্তার দাম ৫০ হাজার টাকা।

ইরি কোকুনে বীজ সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে কৃষক এটিকে ঘরের ভেতর বা খোলা আকাশের নিচেও রাখতে পারেন। ঝড়বৃষ্টি বা রোদের তাপেও ইরি কোকুনে থাকা বীজের গুণগত মান নষ্ট হবে না। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃষক ছয় মাস পর্যন্ত কোনো অসুবিধা ছাড়াই বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন।

এক বছর আগে কৃষি বিভাগ থেকে মাদারীপুর জেলায় একটি ইরি কোকুন দেওয়া হয়। এটি কালকিনি উপজেলার পূর্ব এনায়েতনগর ইউনিয়নের কালাই সরদারেরচর এলাকার ৩০ জন কৃষকের একটি দলের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালাই সরদারেরচর এলাকার ফয়জুল হকের বাড়িতে এই ইরি কোকুনটি রাখা হয়েছে। তিনি তাঁর ঘরের আঙিনায় একটি কাঠ পেতে ইরি কোকুনটি রেখেছেন। এটি ব্যবহার করছেন ৩০ জন কৃষক। ইরি কোকুনটির মধ্যে কৃষকেরা বিরি ধান-৪৮ (আউশ) জাতের বীজ সংরক্ষণ করেছেন।

কৃষক ফয়জুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে সনাতন পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করতে হতো। এখন এই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বীজ রাখায় আমরা ভালোই সুফল পাচ্ছি। এতে ঝামেলা নেই, বীজ নষ্টও হয় না।’

ফয়জুল হক আরও বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বীজ মানসম্মত থাকে না। আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করলে খরচ বেশি হয়। আমরা আগে বীজ মাটির পাত্রে, বোতলে, পটে, টিনে, ড্রামে, প্লাস্টিকের ড্রামে, বস্তায় সংরক্ষণ করতাম। ফলে তখন বীজের গুণাগত মান নষ্ট হতো। অদৃশ্য ছিদ্রের মাধ্যমে বাতাস মাটির বীজপাত্রের ভেতরে ঢুকে বীজের মান নষ্ট করে দিত। এককথায় তখন বীজ সংরক্ষণ আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াত।’

এনায়েতনগর এলাকার কৃষক তাহেল হাওলাদার বলেন, ‘আমরা এখনো সনাতন পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করি। ফলে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হয়। আমরা অন্য এলাকার কৃষক হওয়ায় ফয়জুল হকদের দলে নেই। তাই ইরি কোকুনে বীজ আমরা রাখতে পারি না। আমাদের দাবি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিআইজির (কমন ইন্টারেস্ট গ্রুপ) তালিকাভুক্ত প্রতিটি দলের কাছে এই ইরি কোকুন সরবারহ করতে হবে।’

কালকিনি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘এনএপিটি প্রকল্পের আওতায় ফিলিপাইন থেকে আনা ইরি কোকুনের ব্যয় অনেক। তাই সাধারণ কৃষকেরা কিনতে পারছেন না। তবে সিআইজির গ্রুপে থাকা কৃষকদের এই পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণে আগ্রহ অনেক দেখা যাচ্ছে।’

মিল্টন বিশ্বাস আরও বলেন, ইরি কোকুন ব্যবহার করে কৃষক নিজেদের বীজ নিজেরাই সংরক্ষণ করতে পারবেন। এমনকি তাঁরা বীজ সংরক্ষণ করে তা বিক্রিও করতে পারছেন। এতে প্রান্তিক চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। এখন আর তাঁরা কোম্পানি থেকে কেনা বীজের ওপর নির্ভরশীল থাকছেন না। এর ব্যবহার সিআইজি প্রকল্পে থাকা কৃষকদের মধ্যে আরও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।