সেতুতে গর্ত, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যান

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতকুড়া এলাকায় খালের ওপর থাকা সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবারের।  ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতকুড়া এলাকায় খালের ওপর থাকা সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছবিটি গত বৃহস্পতিবারের। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার কদিম ধল্যা-বাসাইল সড়কে মহেড়া ইউনিয়নের ভাতকুড়া এলাকায় খালের ওপরে থাকা সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে এই সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি সংস্থা ইউএসএআইডি ও কেয়ার বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে কেয়ারের সহায়তায় ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রায় ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই সেতু নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের প্রায় ১০ বছর পর সেতুটি সংস্কার করা হয়। কিন্তু সংস্কারের কিছুদিন যেতে না-যেতেই সেতুতে গর্তের সৃষ্টি হয়। চলাচলের সুবিধার্থে স্থানীয় বাসিন্দারা ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় সেতুটির গর্ত মেরামত করেন। এ ছাড়া প্রায় চার বছর আগে সেতুর দুটি স্থানে গর্ত হলে স্থানীয় লোকজন আবার সেখানে ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে মেরামত করেন। পরে সেতুর দক্ষিণ দিকের গর্ত আবারও নষ্ট হলে তাঁরা আবারও মেরামত করেন। এভাবে কয়েকবার গর্ত মেরামত করেন স্থানীয় লোকজন। প্রায় ছয় মাস আগে সেতুতে পুনরায় গর্ত সৃষ্টি হলেও এখন তা মেরামত করতে কেউই এগিয়ে আসছে না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুটির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ইট ও মাটিবোঝাই ট্রাক, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানসহ মানুষ চলাচল করছে। এ সময় সেতুর গর্তের রডের ওপর ইট ফেলে চলাচলের উপযোগী করছিলেন ইটবোঝাই ভটভটিচালক ডুবাইল গ্রামের শহিদমিয়ার এক লোক। এ সময় শহিদ মিয়া বলেন, ‘বাঁচুম, না মরুম, এইড্যা কোনো বিষয় না। খ্যাপ মারতে অইব।’

এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মির্জাপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বাসাইল ও সখীপুর সদরের সঙ্গে যোগাযোগের সময় লোকজন সময় বাঁচাতে রাস্তাটির এই সেতু ব্যবহার করেন। সেতুটি দিয়ে মির্জাপুরের ছাওয়ালী, ভাতকুড়া, আদাবাড়িসহ অন্তত ৮টি এবং পার্শ্ববর্তী বাসাইলের বিলপাড়া, কাঞ্চনপুর, আদাজান, হাবলা, বাসাইলসহ ১০টি গ্রাম ও আশপাশের অন্তত ২০টি গ্রামের লোকজন নানা ধরনের যানবাহনে ঢাকা বা প্রয়োজনীয় গন্তব্যে যায়, যারা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে। সেতুর ওপর দিয়ে লোকজন মহেড়া আনন্দ ও ছাওয়ালী ভাতকুড়া এমকেএবি উচ্চবিদ্যালয়, মহেড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ভাতকুড়া কমিউনিটি ক্লিনিক, মহেড়া, ছাওয়ালী, বিলপাড়া, ফতেপুর, বানিয়ারা ও কদিম ধল্যা বাজার, মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যাংকের কয়েকটি স্থানীয় শাখায় যাতায়াত করে।

এদিকে ছাওয়ালী-ভাতকুড়া ও আশপাশের এলাকায় অন্তত ১০টি ইটের ভাটা রয়েছে, যেখানে চালকেরা ইট ও মাটিবোঝাই ট্রাক নিয়ে যেতে এই সেতু ব্যবহার করেন। এ ছাড়া মাটি ব্যবসায়ীরা এই সেতুর ওপর দিয়েই প্রতিনিয়ত মাটিবোঝাই ট্রাক আনা–নেওয়া করছেন।

সেতুটির ওপর দিয়ে নিয়মিত মাটিবোঝাই ট্রাক নিয়ে চলাচল করেন সিরাজগঞ্জের ট্রাকচালক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কাম কইর‌্যা খাওন লাগব। ত্যাই ঝুঁকি নিয়ে ট্রাক চালাইতাছি।’

এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানের পিকআপচালক দেলদুয়ারের লালন মিয়া, সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আদাবাড়ি গ্রামের এনামুল হক ও বিকাশ বলেন, প্রতিদিন এই সেতুর ওপর দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। এরপরও কর্তৃপক্ষ সেতু মেরামত করছে না। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া বলেন, ‘সেতুটির কথা কেউই ভাবেন না। আমরা ওই এলাকায় চলাচল করি, তাই কয়েকবার সেতুটি মেরামত (ইউপি থেকে) করেছি। উপজেলা প্রকৌশলীকেও জানিয়েছি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।