শত্রুতায় পুড়ল ৩৬ বিঘা জমির ধানগাছ

শুক্রবার রাতে আগাছানাশক প্রয়োগ করে ঝলসে দেওয়া হয়েছে ধানগাছ। গতকাল দুপুরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার শ্যামবাটি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো
শুক্রবার রাতে আগাছানাশক প্রয়োগ করে ঝলসে দেওয়া হয়েছে ধানগাছ। গতকাল দুপুরে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার শ্যামবাটি গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় অতিরিক্ত পরিমাণ আগাছানাশক কীটনাশক প্রয়োগ করে প্রায় ৩৬ বিঘা জমির বোরো ধানগাছ ঝলসে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনায় পত্নীতলা থানায় গতকাল শনিবার সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরীর নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভোগদখলকারী ফয়জুল হক চৌধুরী।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সুবরাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ফয়জুল হক চৌধুরীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ওই ১২ একর জমির মালিকানা নিয়ে একই গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী বিরোধ চলে আসছে। এ নিয়ে আদালতে একাধিক মামলা-মোকদ্দমা চলমান। বিরোধপূর্ণ ওই ১২ একর জমি উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চকগৌরী, শ্যামবাটি, আমাইপুকুর ও সুবরাজপুর মৌজায় অবস্থিত। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ওই জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন ফয়জুল হক। বিভিন্ন মৌসুমে তাঁর জমি তিনি এলাকার কৃষকদের কাছে বর্গা দিয়ে রাখতেন। চলতি বোরো মৌসুমের জন্যও জমিগুলো তিনি এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষককে বর্গা দিয়ে রেখেছেন। বর্গাচাষিরা সেখানে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। প্রায় সব জমিতেই ধানের আবাদ ভালো হয়েছিল। বেশির ভাগ খেতেই ধানগাছে শিষ বের হতে শুরু করেছিল। কিন্তু শুক্রবার সকালে চাষিরা খেতে গিয়ে দেখতে পান, তাঁদের খেতের সব ধানগাছ ঝলসে গেছে। চাষিদের ধারণা, বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারে কে বা কারা আগাছানাশক কীটনাশক কিংবা বিষ ছিটিয়ে তাঁদের ধানগাছ ঝলসে দিয়েছে।

বর্গাচাষি চকগৌরী গ্রামের আরিফ হোসেন, মফিজ উদ্দিন, হায়দার বাবু ও মকবুল হোসেন বলেন, ‘ফয়জুল হক চৌধুরীর জমি তাঁরা বর্গা নিয়ে কেউ এক বছর, কেউ দুই বছর আবার কোনো কৃষক ১০ বছর ধরে চাষাবাদ করে আসছেন। পুড়ে যাওয়া জমিতে এ বছরও প্রায় ২০ জন বর্গাচাষি ধানের চারা রোপণ করেছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা রাসায়নিক ছিটিয়ে আমাদের খেতের সব ধানগাছ পুড়িয়ে দিয়েছে।’

বর্গাচাষি মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ফয়জুল হক চৌধুরীর কাছ থেকে আমি দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধানের চারা লাগিয়েছিলাম। ধান আবাদের জন্য একটি এনজিও থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণও নিয়েছি। ধান তোলার পর সেই টাকা শোধ করার কথা ছিল।’

জমির ভোগদখলকারী ফয়জুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ওই ১২ একর জমি আমি পৈতৃক সূত্রে পেয়েছি। প্রায় ৪০ বছর ধরে ভোগদখল করে আসছি। কিন্তু ওই জমি নিজের বলে দাবি করে সাখাওয়াত হোসেন চৌধুরী সাত-আট বছর আগে আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলা আদালতে এখনো চলমান। শুক্রবার সকালে বর্গাচাষিরা আমাকে জানিয়েছেন, তাঁদের সব ধানগাছ কে বা কারা রাসায়নিক ছিটিয়ে ঝলসে দিয়েছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে এর সত্যতা পাই। আমার ধারণা, সাখাওয়াত হোসেনই ষড়ষন্ত্র করে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ছিটিয়ে ধানগাছ ঝলসে দিয়েছেন। কারণ, তিন-চার বছর আগে তিনি ওই ১২ একর জমিতে আগাছানাশক ছিটিয়ে খেতের ধানগাছ ঝলসে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে তখন থানায় সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলাম।’

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মামলা করায় আমাকে ফাঁসানোর জন্য ফয়জুল চৌধুরী লোক লাগিয়ে নিজের জমিতে বিষ দিয়ে ধানগাছ পুড়িয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো হাত নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমার বাবা ছালেক চৌধুরী ও ফয়জুল চৌধুরীর বাবা অফির উদ্দিন চৌধুরী সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ওই জমিতে আমার বাবারও অংশ রয়েছে। কিন্তু ফয়জুল চৌধুরী তা জোর করে ভোগদখল করছেন। ওই জমিতে অংশ দাবি করে আমি আদালতে মামলাও করেছি।’