সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যায়নি বিএবি

জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি
জাতীয় সংসদ ভবন। ফাইল ছবি

ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে (১০ শতাংশের নিচে) নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে জাতীয় সংসদের সরকারী প্রতিষ্ঠান কমিটি। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তফসিলী ব্যাংকগুলোকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির সভায় এই সুপারিশ করা হয়। ওই সভায় বেসরকারি ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসকে (বিএবি) উপস্থিত থাকতে বলা হলেও সংগঠনটির কেউ বৈঠকে যোগ দেননি।

২০১৮ সালের ২০ জুন সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে বিএবি ঘোষণা দিয়েছিল, ওই বছরের ১ জুলাই থেকে আমানত ও ঋণের সুদহার হবে যথাক্রমে ৬ শতাংশ ও ৯ শতাংশ। এর পরের দিন সরকারি ব্যাংকগুলো একযোগে বিজ্ঞাপন দিয়ে এই সিদ্ধান্ত পালনের কথা জানিয়ে দেয়। তবে এখনও সবগুলো ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি।

বৈঠক সূত্র জানায়, আজ সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির বৈঠকে ব্যাংক ঋণের সুদের হার নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় কমিটির সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বৈঠকে বিএবিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তারা বৈঠকে যোগ দিচ্ছে জানিয়েও শেষ পর্যন্ত কেউ যোগ দেননি। এতে সংসদীয় কমিটি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

জানতে চাইলে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তাঁরা দুই মাস সময় বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে বলেছেন, এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। যাতে আবার এ জন্য তাদের ডাকতে না হয়। এ ছাড়া সুদের হার নগরের চেয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমানো যায় কি না, সেটা দেখতে বলা হয়েছে।

বিএবির বিষয়ে আ স ম ফিরোজ বলেন, বিএবির কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে আসেননি। তাঁরা জানিয়েছিল ‘অন দ্যা ওয়ে’। সকাল ১১টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত বৈঠক হয়েছে, কিন্তু তাদের কেউ বৈঠকে যোগ দেননি। হয়তো কেউ রওনা হয়েছিলেন, মাঝপথে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়িক সভার কারণে তিনি সংসদীয় কমিটির সভায় যেতে পারেননি। সংগঠনের একজন ভাইস চেয়ারম্যান ওই সভায় যোগদানের কথা ছিল। কিন্তু যানজটের কারণে তিনি যথা সময়ে পৌঁছাতে পারেননি।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে জানানো হয় শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পোশাক শিল্পের ২৭৯টি এবং নন টেক্সটাইল শিল্প খাতের ৪১১টি প্রতিষ্ঠানকে রুগ্‌ণ শিল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।এখন পর্যন্ত ৪২৬টি রুগ্‌ণ শিল্পের (নন-টেক্সটাইল) জন্য সুদ ভর্তুকিসহ নমনীয় পরিশোধ সূচিতে ঋণ হিসাব অবসায়নে বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজের আওতায় অধিকাংশ ঋণ হিসাব নিস্পত্তি করা হয়েছে। রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিশেষায়িত ব্যাংকসগুলোর সুদ মওকুফের ক্ষেত্রে সরকার নীতিমালা জারি করেছে। এর ফলে অনেক রুগ্‌ণ শিল্প প্রতিষ্ঠান, বন্ধ ও অচল মিল কারখানা সুদ মওকুফ সুবিধা পেয়েছে। এতে এসব প্রতিষ্ঠানের অবশিষ্ট অনাদায়ি-শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় সহজ হয়েছে।

কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণ চন্দ চন্দ্র, মাহবুব উল আলম হানিফ, মির্জা আজম ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বৈঠকে অংশ নেন।