মঙ্গল শোভাযাত্রায় এবার জ্যান্ত হাতি

বর্ষবরণ উপলক্ষে নগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত রোববার।  ছবি: প্রথম আলো
বর্ষবরণ উপলক্ষে নগরে মঙ্গল শোভাযাত্রা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গত রোববার। ছবি: প্রথম আলো

মঙ্গল শোভাযাত্রা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শত শত মানুষের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়েছে বাংলা নতুন বছর ১৪২৬। জেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে পয়লা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষে গত রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল।

রাজশাহী
এখানে সকালে বের করা মঙ্গল শোভাযাত্রার সামনে ছিল জ্যান্ত হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি, মহিষের গাড়ি ও ময়ূরের মডেল। রাজশাহী কলেজের শোভাযাত্রার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পঙ্খীরাজ’। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ‘হীরক রাজার আমন্ত্রণে স্থাপত্য প্রাঙ্গণে’ শিরোনামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শহর থেকে গ্রামেও এবার ছড়িয়ে পড়ে বৈশাখী মেলা। এসব মেলায় লাঠিখেলা জারি-সারি গানের আয়োজন ছিল উপভোগ্য।

সকাল সাড়ে ৭টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। এই শোভাযাত্রার আগে আগে হেঁটে যাচ্ছিল একটি হাতি, তারপরে ছিল ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি ও মহিষের গাড়ি। এটি নগরের রিভারভিউ কালেক্টরেট স্কুলে আয়োজিত মেলায় গিয়ে শেষ হয়। রাজশাহী কলেজের মঙ্গল শোভাযাত্রায় কলেজের শিক্ষার্থীরা পালকিসহ বিভিন্ন জীবজন্তুর আকৃতিসংবলিত ফেস্টুন ও আবহমান বাংলার কৃষির ঐতিহ্য লাঙল-জোয়াল, চালুন–কুলা নিয়ে কিষান-কিষানি ও বর-বধূর সাজে অংশ নেয়। শোভাযাত্রা শেষে পান্তা–ইলিশ, মুড়িমুড়কি, দই ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। রাজশাহী আর্ট কলেজের শোভাযাত্রায় ময়ূরের মডেল বহন করা হয়। এদিকে জেলার চারঘাটের ডাকরা ডিগ্রি কলেজে সকালে পান্তা পরিবেশন, শোভাযাত্রাসহ লঠিখেলা ও জারিগানের আসর বসে। বাঘা উপজেলার পীরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এতে ‘আলকাব রঙ্গরস’ ও বাউল গানের আয়োজন করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
জেলা শহরের গ্রিন ভিউ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আমবাগানে বৈশাখী চত্বরে সকাল সাতটায় বর্ষবরণ সংগীতের মধ্য দিয়ে জেলা প্রশাসনের পয়লা বৈশাখের কর্মসূচি শুরু হয়। এখান থেকেই সকাল আটটায় শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য এবং সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে এই শোভাযাত্রা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে আবারও বৈশাখী চত্বরে এসে শেষ হয়। সাড়ে নয়টায় বৈশাখী আপ্যায়ন শেষে শুরু হয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। আমবাগানে বসে মেলা। বরেন্দ্র ভূমির গহিনে রাজশাহীর গোদাগাড়ীয় বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালা দিবসটি উদ্যাপন করে। এ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ভূরিভোজের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক ও গ্রামবাসীর মধ্যে বিনা মূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয়। এ ছাড়া মনামিনা কৃষি খামারের উদ্যোগে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কমলা, মাল্টা ফলের চারা ও ফুলের চারা রোপণ করা হয়। অনুষ্ঠানে অংশ নেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধুরাও।

নাটোর
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল আটটায় শহরের কানাইখালি মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেন নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম, নারী সাংসদ রত্না আহম্মেদ, জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ, পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন প্রমুখ। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের তৃষ্ণা নিবারণ করে প্রথম আলো নাটোর বন্ধুসভা ও অ্যাপেক্স ক্লাব। বন্ধুসভা সরবরাহ করে স্যালাইন শরবত। আর অ্যাপেক্স ক্লাব সরবরাহ করে শীতল লেবুর শরবত। সাংসদ শফিকুল ইসলাম ও রত্না আহম্মেদ এবং জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বন্ধুসভার স্টলে এসে সর্বসাধারণকে স্যালাইন পানি খাওয়ানোয় বন্ধুসভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

পাবনা
গণশিল্পী সংস্থা পাবনা জেলা শাখা, পাবনা প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে গানে গানে সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর জেলা প্রশাসন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কয়ার গ্রুপ, নাট্য সংগঠন পাবনা ড্রামা সার্কেল, ইউনিভার্সাল গ্রুপসহ বিভিন্ন শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। ঢোল আর ঢাকের বাদ্যে মুখর হয়ে ওঠে পাবনা জেলা শহর। সকাল সাড়ে আটটায় পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে শুরু হয় বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। স্কয়ার গ্রুপের আয়োজনে রুচি বৈশাখী উৎসবে মাতে শত শত মানুষ।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ এবং প্রতিনিধি, নাটোর ও পাবনা]