দাওয়াত না পেয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করলেন চেয়ারম্যান

গত রোববার সকাল আটটা। পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনে উৎসবমুখর গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলা পরিষদ চত্বর। শিক্ষার্থীদের হাতে নানা রঙের প্ল্যাকার্ড, মুখোশ। বাদ্যযন্ত্রে গান বাজছে। শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি শেষ। শোভাযাত্রার সামনের সারিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহিমা খাতুন। শোভাযাত্রা শুরু হবে এমন সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে পরিষদ চত্বরে হাজির হন উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহারিয়া খান। এরপর সাহারিয়া খান ও তাঁর লোকজন ইউএনওকে উদ্দেশ করে শুরু করেন গালিগালাজ।

অবস্থা বেগতিক দেখে উপস্থিত লোকজন ছোটাছুটি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ইউএনও রহিমা খাতুনও নিজের কার্যালয়ে চলে যান। ফলে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পণ্ড হয়ে যায় উপজেলা প্রশাসনের সব আয়োজন। এদিকে প্রশাসনের অনুষ্ঠান পণ্ড করে সকাল ৯টার দিকে পৃথক শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে রোববার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছিল উপজেলা প্রশাসন। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা, পান্তা ভাত খাওয়া, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সব অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। সকাল ৮টায় ইউএনও রহিমা খাতুনের নেতৃত্বে মঙ্গল শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করার কথা ছিল। কিন্তু এমন সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান উপজেলা পরিষদ চত্বরে হাজির হন। আয়োজকেরা হকচকিত হয়ে পড়েন। সাহারিয়া খান ও তাঁর লোকজন ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। অঘটন ঘটার আশঙ্কায় উপস্থিত লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

এদিকে প্রশাসনের অনুষ্ঠান পণ্ড করে সকাল ৯টার দিকে পৃথক শোভাযাত্রা বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ। নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহারিয়া খানের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। পরে পাবলিক লাইব্রেরি চত্বরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সাদুল্যাপুর থানার ওসি আরশেদুল হক বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ আমি ছুটিতে ছিলাম। তবে শুনেছি, উপজেলা প্রশাসন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে বৈশাখী অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেয়নি।’

এ প্রসঙ্গে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাহারিয়া খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইউএনও স্থানীয় আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেননি। এমনকি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও আমাকে দাওয়াত কিংবা কার্ড পাঠাননি। উপজেলা চেয়ারম্যানদের গেজেট হয়েছে। কিন্তু গেজেটের বিষয়টি তিনি আমাকে জানাননি। এতে আমরা কী বুঝব? তিনি কোন আদর্শের মানুষ, বিএনপি না জামায়াতের। এসব কারণে আমরা বলেছি, ইউএনওকে বাদ দিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে। কিন্তু তা না হওয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা করতে বাধা দেন।’