ভাঙা ঘরেই চলছে কমিউনিটি ক্লিনিক

শ্রীপুরের কাফিলাতলি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। ১১ এপ্রিল সকালে তোলা।  ছবি: প্রথম আলো
শ্রীপুরের কাফিলাতলি কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম। ১১ এপ্রিল সকালে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

প্রখর রোদ। টিনের তৈরি একটি ঘর। বিদ্যুৎ নেই। ভেতরে শিশু-বৃদ্ধসহ ছয়জন অপেক্ষারত। সবাই গরমে ঘামছেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক একজন একজন করে ডেকে নিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

চিত্রটি একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের। এটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কাফিলাতলী এলাকায়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায় প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার এই হাল। মূল ভবনটি এখান থেকে ৩০০ গজ দূরে। সেটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ২০১৩ সালে। বর্তমানে পুরো কার্যক্রম চলছে এই টিনের ঘরে। পুরো উপজেলার ৫২টি ক্লিনিকের মধ্যে ৩টির ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পরিত্যক্ত হয়েছে। এই ক্লিনিকগুলোর কাজ চলছে অন্য জায়গায়। আর ১৬টি ক্লিনিক সংস্কার করলে কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চালানো যাবে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ৫২টি ক্লিনিকের মধ্যে ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মূল ভবন ব্যবহারের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে অস্থায়ী ঘরে। এই তিন কমিউনিটি ক্লিনিক হলো রাজাবাড়ি ইউনিয়নের কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিক, শ্রীপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের লোহাগাছ কমিউনিটি ক্লিনিক ও গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর কমিউনিটি ক্লিনিক।

কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকটির দায়িত্বে আছেন এখানকার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) মারুফ হাসান। তিনি এখানে যোগ দিয়েছেন কিছুদিন আগে। ক্লিনিক সূত্রে জানা যায়, মূল ভবনটি অনেক আগেই পরিত্যক্ত হওয়ায় অন্য এক জায়গায় কাজ চলছে।

একই দিন মূল ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের দুই পাশের পিলার ও দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত ভবনটিতে ২০১৩ সালে ফাটল দেখা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। তখন থেকেই এটি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। দেখতে নতুন মনে হলেও ভবনটির চারপাশে আগাছা ও লতাগুল্মে ভরে গেছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে মূল ভবন থেকে কমিউনিটি গ্রুপের সদস্য মোফাজ্জলের মনিহারির দোকানে এবং ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এই টিনের ঘরে কমিউনিটি ক্লিনিকটি স্থানান্তর করা হয়। মুদি দোকানের ভেতরে আড়াই বছর স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পরিচালিত হয়েছিল।

লতিফপুর কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, এর মূল ভবনটি লতাগুল্মে ভরে গেছে। এটিও বেশ কয়েক বছর ধরে পরিত্যক্ত। তাই কার্যক্রম চালাতে পাশের একটি বাড়ির বারান্দায় নেওয়া হয়েছে ক্লিনিকটি। লোহাগাছ কমিউনিটি ক্লিনিকে বেলা একটায় গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের কাছেই একটি ভবন। ভবনের পুরোটাই ভাঙাচোরা। এটিও বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। তাই বর্তমানে সেবা দিতে ক্লিনিকটি পাশের একটি মাটির তৈরি ক্লাবঘরে স্থানান্তর করা হয়েছে। মাটির পুরোনো এই ঘরটির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইনে গাড়ি এলে ঘরটি কাঁপে বলে জানিয়েছেন ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফারজানা সুলতানা। তিনি জানান, রোগীরা প্রায়ই অভিযোগ করেন জরাজীর্ণ ঘর নিয়ে।

কাফিলাতলী কমিউনিটি ক্লিনিকে আড়াই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে যান শাহিনুর আক্তার নামের এক গৃহবধূ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোদ-বৃষ্টিতে এসব ঘরে থাকা কষ্টকর। এভাবে স্বাস্থ্যসেবা চলতে পারে না। আমাদের বসারও জায়গা নেই।’ তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, স্বাস্থ্যসেবার এই খাতটির বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে সবাইকে। বৃদ্ধ ময়না খাতুন বলেন, আগের ভবনটি ভেঙে নতুন ভবন করে দিলে সেবা দেওয়া সহজ হবে। একই গ্রামের মনোয়ারা খাতুন, মুক্তা বেগম, কিবরিয়া মোল্লা একই অভিযোগ করে বলেন, এমন পরিবেশে চিকিৎসা নেওয়াটা খুব কষ্টের। টিনের গরমে রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তাঁরা বলেন, বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার এ পদ্ধতিটা খুব কাজের। কিন্তু সেবাপ্রার্থীদের অধিকতর সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। কোনো শৌচাগার নেই, পানির ব্যবস্থা নেই—এটা কোনো চিকিৎসার পরিবেশ হতে পারে না।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মইনুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর পুনর্নির্মাণের জন্য বারবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করে আসছি। তবে এই তিনটির মধ্যে শুধু লতিফপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ভবনের জন্য বরাদ্দ এসেছে। কার্যাদেশ দিয়ে কাজ শুরু হবে। অন্য দুটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি অনেক কষ্টে তাঁদের দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আবারও আবেদন করব।’