বগুড়ার আ.লীগ নেতা মান্নানসহ ২ জন কারাগারে

আবদুল মান্নান
আবদুল মান্নান

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বগুড়া শাখা থেকে ৩১ কোটি ১৮ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা মামলায় বগুড়ার আওয়ামী লীগের এক নেতাসহ দুজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বগুড়া জেলা বিশেষ জজ এমরান হোসেন চৌধুরীর আদালত এ নির্দেশ দেন।

জেলহাজতে যাওয়া আসামিরা হলেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট (বর্তমানে বরখাস্ত) রফিকুল ইসলাম। আরেকজন বগুড়ার শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক আবদুল মান্নান ওরফে ফ্রেম মান্নান। তিনি বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও বগুড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

৪০ কোটি ৮৩ লাখ ৭৬ হাজার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বগুড়া সদর থানায় ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে মামলার অভিযোগপত্রে নয়জনকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে তিনজন জামিনে আছেন।


মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত ও অপরাধী চক্রের অন্যতম হোতা হিসেবে ব্যাংকের বগুড়া শাখার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপক (সাময়িক বরখাস্ত) রফিকুল ইসলাম, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ শাখার ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (সাময়িক বরখাস্ত) মো. আতিকুল কবির, বগুড়া শাখার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা (সাময়িক বরখাস্ত) মো. মাহবুবুর রহমানের যোগসাজশে ব্যাংকের গ্রাহকদের হিসাব থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাংকের একটি তদন্ত দল ওই সময়ের হিসাবপত্র খতিয়ে দেখেন, অর্থ আত্মসাৎকারীরা এই শাখার বিনিয়োগ–সুবিধা গ্রহণকারী গ্রাহক মেসার্স আবু বকর সিদ্দিক ও মেসার্স আবদুল কুদ্দুস অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি করে যোগসাজশকারীদের ব্যাংক হিসাবে ওই টাকা স্থানান্তর করেন। ওই টাকা তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ জালিয়াত চক্র আত্মসাৎ করে। ব্যাংকের অনুসন্ধানে ১৯টি ভুয়া হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়। এগুলো হলো মেসার্স এমএম ট্রেডিংয়ের মালিক মো. আকতার হোসেন ১০ কোটি ১০ লাখ, মেসার্স রিমা ফ্লাওয়ার মিলসের মো. জহুরুল হক ১০ কোটি ১৮ লাখ, মেসার্স নিলয় এন্টারপ্রাইজের মো. এনামুল হক প্রায় ৭ কোটি ৬০ লাখ, মেসার্স রুমা ট্রেডার্সের আইরিন হোসাইন ১৫ লাখ, মেসার্স মাসফা এন্টারপ্রাইজের মাকছুদুল আলম প্রায় ৬ কোটি ৪৭ লাখ, মেসার্স ফিরোজ কনস্ট্রাকশনের ফিরোজ আহম্মেদের ৩ কোটি ৪২ লাখ, মেসার্স অতিথি ফিলিং স্টেশনের জাহাঙ্গীর আলম ৫ লাখ, মেসার্স হাসান কনস্ট্রাকশনের মো. ইমরুল ২৩ লাখ এবং মেসার্স জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মো. জাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রায় ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

এ ছাড়া মেসার্স হীরা মোটরসের নিখিল রঞ্জন কর্মকার ৬০ লাখ, নিশিতা এন্টারপ্রাইজের নাহিদুজ্জামান ৩০ লাখ, মেসার্স আবদুল মতিন ট্রেডার্সের আবদুল মতিন ২০ লাখ, মো. আখতার হোসেন ১৪ লাখ, মেসার্স আর রহমান এন্টারপ্রাইজের সোহেল রানা ১৪ লাখ, মেসার্স সুমন এন্টারপ্রাইজের মো. মাহবুবুর রহমান ১৩ লাখ, মো. রফিকুল ইসলাম ৩ লাখ, মো. ফেরদৌস আলম ২০ লাখ, আরিফুল কবির ৩২ লাখ এবং মাসুদ আহমেদের বিরুদ্ধে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এই মামলা তদন্তের জন্য দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নেওয়া হয়। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করেন প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আখতার হামিদ ভূঞা। এরপর এ মামলার তদন্ত করেন উপপরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক। পরে ২০১৪ সালের ৪ জুন তিনি আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সব আসামিকে অব্যাহতি দেন। এরপর হাইকোর্টে নারাজি আবেদন দাখিল করে ব্যাংক। নারাজি আমলে নিয়ে বিষয়টি আবারও তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে দুদকের সমন্বিত কার্যালয়ের (বগুড়া) তৎকালীন উপপরিচালক (বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত) মো. আনোয়ারুল হককে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
আনোয়ারুল এ ঘটনা তদন্ত করে নয়জনের নামে অভিযোগপত্র জমা দেন ২০১৭ সালের আগস্টে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ব্যাংকের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা রফিকুল, আতিকুল কবির, মাহবুবুর রহমান, জালিয়াত চক্রের সদস্য মো. আকতার হোসেন, মো. জহুরুল হক, মো. এনামুল হক, মাকসুদুল হক, ফেরদৌস আলম ও শুকরা এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. আবদুল মান্নান। তবে এজাহারে থাকা অন্য আসামিরা টাকা পরিশোধ এবং ব্যাংকের পাওনা দাবি না থাকায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আদালত ওই সময় তাঁদের বিরুদ্ধে সময় জারি করেন। এরপরও আসামিরা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় প্রায় এক বছর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর মধ্যে আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন আতিকুল, মাহবুবুর ও ফেরদৌস। আজ গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত দুই আসামি মান্নান ও রফিকুল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করেন আদালত।