ঢাকায় জরাজীর্ণ ৫ মার্কেট ভাঙা হবে

ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঘোষিত মার্কেটের মধ্যে কারওয়ান বাজারের এই মার্কেটটিও আছে।
ডিএনসিসির পরিত্যক্ত ঘোষিত মার্কেটের মধ্যে কারওয়ান বাজারের এই মার্কেটটিও আছে।

পরিত্যক্ত ঘোষিত পাঁচটি মার্কেট ও একটি বাস টার্মিনাল ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তবে অধিকাংশ মার্কেটে এখনো দোকানপাট আছে, ব্যবসা চলছে। ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করে ভবন ভাঙার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানায় সিটি করপোরেশন।

এক যুগের বেশি সময় আগে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। সে সময় সেগুলো ভাঙার কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। এত বছরে ভবনগুলো আরও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রক্রিয়া শেষ হতে কত সময় লাগতে পারে, তা নিশ্চিত করতে পারেনি উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিত্যক্ত ঘোষণা করা মার্কেটগুলো হলো গুলশান ১ নম্বরের পাকা মার্কেট (দক্ষিণ), গুলশান ২ নম্বরের কাঁচা মার্কেট (উত্তর), মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেট, রায়েরবাজার মার্কেট এবং কারওয়ান বাজার মার্কেটের চারটি ভবন। এ ছাড়া আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ডিএনসিসির সম্পত্তি বিভাগ থেকে জানা যায়, গুলশান ২ নম্বরের কাঁচা মার্কেটের নিচতলার মাছ ও মাংসের বাজারের অংশটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই অংশ দ্রুত ভাঙার সুপারিশ করা হয়েছে। গুলশান ১ নম্বরের পাকা মার্কেটে ২০১৭ সালে আগুন লাগার পর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে মার্কেটটি ব্যবহারের অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। সে সময় এটি ভেঙে ফেলা অথবা সংস্কার করার সুপারিশ করে কমিটি। তবে ব্যবসায়ীরা সরেননি। গত ৩০ মার্চ সেখানে আবারও আগুন লাগে। এই বাজার–সংলগ্ন দ্বিতল পাকা মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এই মাসের প্রথম সপ্তাহে ডিএনসিসির সভায় ভবনটি দ্রুত পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সুপারিশ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেটের তিনতলা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই চালু আছে। কারওয়ান বাজার ১ নম্বর ভবন মার্কেটটি তিনতলা। এটিও পরিত্যক্ত ঘোষণা সুপারিশ করেছিল বুয়েট। সেখানে দ্বিতল আরেকটি মার্কেট ও আড়ত ভবনটিও ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে ভবনগুলো দেয়ালের আস্তর খসে পড়েছে কোথাও কোথাও।

সম্পত্তি বিভাগ সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতেই ব্যবসা চলছে। এ মাসেই এ মার্কেটের দোতলা ও সিঁড়ি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর রায়েরবাজারের দ্বিতল মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অব্যবহৃত। আমিনবাজার ট্রাক টার্মিনাল ভবনটি ট্রাক টার্মিনালের অফিস ও বিশ্রামাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এই ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী।

ডিএনসিসি জানায়, কারওয়ান বাজারের ডিএনসিসি মার্কেটের দোকানগুলো যাত্রাবাড়ী, আমিনবাজার ও মহাখালীতে তিনটি বহুতল ভবনে স্থানান্তরের কথা। সেসব ভবনের কাজ কিছু বাকি আছে। তা দ্রুত শেষ করে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। আর অন্য মার্কেটগুলো ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা হবে। এর আগে সেখানকার ব্যবসায়ীদের মার্কেটের আশপাশের খালি অব্যবহৃত জায়গায় সাময়িকভাবে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, মার্কেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর সেগুলোতে পরিত্যক্ত ভবনের ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হবে। এ নিয়ে কাজ করছে রাজস্ব বিভাগ। তবে এই ভবনগুলো এখনই ভেঙে ফেলা যাচ্ছে না। প্রত্যেকটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের বিকল্প ব্যবস্থা করে এবং নতুন জায়গায় স্থানান্তর করার পর এই ভবন ভাঙার কাজ শুরু করতে হবে।

ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মার্কেট ভবনগুলো ভাঙার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সামনে বিজ্ঞপ্তি ও বড় ব্যানার টাঙানোর কাজ শুরু করেছি। সেখানে বুয়েট কর্তৃক পরীক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণা এবং মার্কেট ভবনে ব্যবসায়ীদের দোকান সরিয়ে নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ীদের কাছে এ নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।’ তবে কারওয়ান বাজার আড়ত মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল লতিফ বলেন, মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণার কোনো বিজ্ঞপ্তি এখনো তাঁরা পাননি। পুনর্বাসন ছাড়া এসব মার্কেট ভেঙে ফেলা হলে ব্যবসায়ীদের জন্য বিপদের হবে।