মদ খাইয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ

বান্দরবানের লামা উপজেলায় মদ খাইয়ে এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের শিকার নারীকে পরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্য ও তাঁর ছেলে মারধর করেন এবং তিন ইউপি সদস্য বাজারে প্রকাশ্যে বিচার বসিয়ে সাদা কাগজে ওই নারীর সই নেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এক তামাকখেতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন ২২ বছর বয়সী ওই নারী। ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল দিবাগত রাত একটার সময় নূর হোসেন নামের একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ওই নারীকে ছেড়ে তাঁর স্বামী চলে যান। ওই নারী এখন ছয় বছর বয়সী এক ছেলেসন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন।

গতকাল রাত ১১টার দিকে প্রথম আলোকে দেওয়া ওই নারীর ভাষ্য, বদুঝিরি এলাকার নূর হোসেন, বড় ছনখোলা এলাকার নূর মোহাম্মদ ও কুমারী এলাকার মো. রুবেল জোর করে মদ খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। বিকেল পাঁচটার দিকে পাশের এলাকার লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে কাফি উদ্দিন ওই নারীকে মারধর করেন। তাঁকে বাজারে নিয়ে প্রকাশ্যে বিচার বসান তিন ইউপি সদস্য মো. সহিদুজ্জামান, কামাল উদ্দিন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য আনাই মারমা।

ওই নারী বলেন, ‘তাঁরা আমার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ না শুনে সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে বলেন, যা হয়েছে এখানেই শেষ। কোনো অভিযোগ করবে না। তাঁরা নূর হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও রুবেলকে বাড়ি চলে যেতে বলেন।’

ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ধর্ষণের শিকার নারীকে মারধরের কথা অস্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি মারধর করিনি। এলাকাবাসী তাঁদের ঘিরে রেখেছিল বলে আমি মেয়েটিকেসহ তিনজন পুরুষকে বাজারে নিয়ে আসি। মেয়েটিকে তাঁর মায়ের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা তিনজন ইউপি সদস্য সাদা কাগজে মেয়েটির টিপসই নিয়ে নিই।’

কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘মেয়েটির সই নেওয়ার আগে সিদ্ধান্ত হয়, এ ঘটনায় পরবর্তী সময়ে কোনো সমস্যা হলে আমরা নূর হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও রুবেলকে প্রশাসনের হাতে তুলে দেব। এরপর ওই মেয়ে এবং তার মা বাড়ি চলে যায়।’

বিচার বসানোর ঘটনায় যুক্ত আরেক ইউপি সদস্য সহিদুজ্জামানও একই কথা বলেন।

ইউপি সদস্য আনাই মারমার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওই নারীকে উদ্ধারের সময় তাঁর পোশাক এলোমেলো ছিল, নেশাগ্রস্ত ছিলেন। এ ঘটনায় এলাকার প্রভাবশালী লোকজন জড়িত উল্লেখ করে তাঁরা আর কিছু বলতে চাননি।

ধর্ষণের শিকার নারীর মা তাঁর মেয়ের ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে লামা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজা নাহা বলেন, ধর্ষণের অভিযোগ করা নারী এখন থানায় পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। ধর্ষণের অভিযোগে গতকাল রাতে নূর হোসেন নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।