দুই বছরেও চালু হয়নি

লোকবলের অভাবে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের কার্যক্রম দুই বছরেও শুরু হয়নি। এতে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চরাঞ্চলের মা ও শিশুরা। কার্যক্রম চালু না হওয়ায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির আসবাবপত্রও নষ্ট হচ্ছে।
জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আজিমনগর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২০১২-১৩ অর্থবছরে হাতিঘাটা গ্রামে কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কাজ শেষ হয়। ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করা হয়। এক বছর আগে কেন্দ্রটি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
চরাঞ্চলের নসুরতপুর গ্রামের আবদুস সালাম তালুকদার, ইব্রাহিমপুর গ্রামের আবদুল ওহাব ও ফরহাদ হোসেন বলেন, উপজেলা সদর থেকে আজিমনগর চরাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। চারদিকে পদ্মা নদীবেষ্টিত এই চরাঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটির কার্যক্রম চালু না হওয়ায় চরাঞ্চলের শিশু ও প্রসূতিরা স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষ করে প্রসূতিসেবায় চরাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নৌকায় ৮-১০ কিলোমিটার পদ্মা পাড়ি দিয়ে ঢাকার নবাবগঞ্জ এবং হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা কোনো ক্লিনিকে চিকিৎসাসেবা নিতে যেতে হয় রোগীদের। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মাঝেমধ্যে প্রাণহানির
ঘটনাও ঘটে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ২৯ জুলাই স্থানীয় ধাইয়ের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিকারপুর গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী রহিমন বিবি (২৮)। হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে ২৯ মে এনায়েতপুর গ্রামের আলাল মিয়ার স্ত্রী হাওয়া আক্তার (২২) সন্তান প্রসবের পর অসুস্থ হয়ে নবাবগঞ্জ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
গত ১১ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটির মূল ফটক খোলা থাকলেও ভেতরে তালাবদ্ধ। এটির নিচতলায় চেয়ার-টেবিলসহ অন্যান্য আসবাব ব্যবহার না করায় ধুলোবালি পড়ে তা নষ্ট হচ্ছে। দোতলায় দুটি কক্ষে স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক থাকেন।
তাঁদের একজন দিলীপ রায় জানান, এই চরে আবাসনব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির দুটি কক্ষে তাঁরা দুজন থাকছেন। কেন্দ্রটি চালু হলে তাঁরা অন্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করবেন। তিনি এটি চালুর দাবি জানান।
জেলা পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, চরাঞ্চলের প্রসূতি মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু করা দরকার। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এটি দ্রুত চালুর ব্যবস্থা করতে তিনি উদ্যোগ নেবেন।