৫০ বছরে দেশের মানুষ বেড়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ

>
  • ইউএনএফপিএর বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০১৯ প্রকাশ
  • প্রতিবেদনে ৫০ বছরে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে দেশের অর্জনের তথ্য
  • স্বাস্থ্য খাতের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বলছে, ৫০ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ। বছরে এখন ১.১ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৮১ লাখ। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর।

ইউএনএফপিএর বার্ষিক বৈশ্বিক জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০১৯-এ এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশে ৫০ শতাংশ মা প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা পান না। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সবচেয়ে বেশি। চাহিদা থাকার পরও ১১ শতাংশ নারী প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পান না।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই বৈশ্বিক প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, এ বছর ইউএনএফপিএর ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। পাশাপাশি জনসংখ্যা ও উন্নয়ন-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের (আইসিপিডি) ২৫ বছরও এবার পূর্ণ হচ্ছে। এ বছরের বৈশ্বিক প্রতিবেদনের শিরোনাম, ‘অসমাপ্ত কাজ: সকলের অধিকার ও পছন্দের পশ্চাদ্ধাবন’। প্রতিবেদনে গত ৫০ বছরে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা খাতে দেশের অর্জন নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছু করতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, জনসংখ্যার বিষয়গুলো সরকার অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। আর স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় কমাতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।

১৭৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীদের ৫৭ শতাংশ আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহার করেন। এক লাখ জীবিত শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ১৭৬ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। বাল্যবিবাহের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। দেশের ১৮ বছর বয়সী কিশোরীদের ৫৯ শতাংশ বিবাহিত। দেশে মোট প্রজনন হার ২, অর্থাৎ একজন নারী গড়ে দুটি শিশুর জন্ম দিচ্ছেন। ৫০ বছর আগে গড়ে ৬ দশমিক ৯টি শিশুর জন্ম দিতেন।

ইউএনএফপিএর অনুমিত হিসাবে বিশ্বের জনসংখ্যা এখন ৭৪০ কোটি। বিশ্বে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রী ব্যবহারের হার ৫৮ শতাংশ। বৈশ্বিক প্রজনন হার ২ দশমিক ৫। এক লাখ শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বে ২১৬ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকার, নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও ইউএনএফপিএর প্রচেষ্টায় গত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী নারী ও কিশোরীদের জন্য অনেক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও নারীর নিজের শরীরের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার এবং নিজের পছন্দ বেছে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়াতে এখনো অনেক কিছু করার আছে।

স্বাগত বক্তৃতায় ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি অসা টর্কেলসন বলেন, নারীর অধিকার, নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন ও টেকসই উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের বেশ কিছু সাফল্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়নে কিছু ঘাটতি বা ফাঁক আছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিবাহ, এটি তারই একটি উদাহরণ। মাতৃমৃত্যুহার কমলেও এখনো তা উদ্বেগজনক।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর পক্ষ থেকে আইসিপিডির প্রতিশ্রুতি ও ২০৩০ সালের এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তথ্য দেওয়া হয়। জনসংখ্যা কাঠামোর কারণে বাংলাদেশ সুবর্ণ সময়ের মধ্যে আছে। জনসংখ্যার ৬৩ শতাংশ কর্মক্ষম। যুব জনশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ না বাড়ালে জনসংখ্যা কাঠামোর সুযোগ বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পারবে না। এ বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক বরকত-ই-খুদা বলেন, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ‘জনসংখ্যা সুযোগ’ না হয়ে ‘জনসংখ্যা বিপর্যয়’ হতে পারে।

নুসরাত হত্যার বিচার হবে, এই আশা প্রকাশ করে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, লিঙ্গবৈষম্য একটি বৈশ্বিক সমস্যা। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের অন্যতম কেন্দ্রীয় বিষয় লিঙ্গবৈষম্য দূর করা। বৈষম্য জিইয়ে রেখে অন্যান্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, পরিবার পরিকল্পনা সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে গ্রামীণ নারীরা পিছিয়ে আছে।

জাতিসংঘের এই প্রতিনিধি বলেন, মাতৃমৃত্যু, জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর অপূর্ণ চাহিদা এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি আছে। এই তিন ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের এখনো অনেক কিছু করার আছে।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএর মাঠপর্যায়ের প্রবক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বরগুনার বুড়িচর এএমজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সোহেলী পারভিন। তিনি বলেন, কিশোর-কিশোরীরা অধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করলে তারা ভবিষ্যতে দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।