লালমনিরহাটে সরকারি প্রকৌশলীকে পেটালেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি!

লালমনিরহাটে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক সহসভাপতির বিরুদ্ধে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা না পেয়ে মারধর করা হয় উল্লেখ করে মামলা করেছেন ওই কর্মকর্তা।

অভিযোগে বলা হয়, স্থানীয় একটি গ্রামের রাস্তায় কার্পেটিংয়ের কাজ করার সময় এলজিইডির দায়িত্বরত উপসহকারী প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলামের কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এ কে এম হুমায়ুন কবীর। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় প্রকৌশলীকে মারধর করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার সকালে আদিতমারীর সরলখাঁ গ্রামের একটি সড়কের কার্পেটিং কাজ শুরু করার সময় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে লালমনিরহাট ও আদিতমারীর এলজিইডি দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলাম ও কার্যসহকারী আশরাফুল আলমকে উদ্ধার করেন। পরে তাঁদের আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। জাকিরুল ইসলামকে প্রথমে সেখানে ভর্তি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। আশরাফুল আলম আদিতমারী হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

খবর পেয়ে আদিতমারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলাম বাদী হয়ে আদিতমারী থানায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রাতে সেই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

মামলার এজাহার, এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, আদিতমারীর সারপুকুর ইউনিয়নের সরলখাঁ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম-উত্তর দিকে একটি সড়ক আছে। গ্রামীণ সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সরলখাঁ জেলা সড়ক থেকে সারপুকুর সড়ক পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়। এ সময় ঠিকাদারের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ও এলজিইডির আদিতমারী উপজেলা কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাকিরুল ইসলাম ও একই দপ্তরের কার্যসহকারী আশরাফুল আলমের তত্ত্বাবধানে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শুরু করা হয়। কাজ শুরুর আনুমানিক ৩০ মিনিট পর লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এ কে এম হুমায়ুন কবীর (৪৫) ও তাঁর ভাই রাশেদুজ্জামান ওরফে রাশেদের (৩৫) নেতৃত্বে ১০–১৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলামসহ কাজের সঙ্গে জড়িত অন্যদের ঘেরাও করে ৫ লাখ চাঁদা দাবি করেন। তাঁদের কোনো রকম চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হুমায়ুন কবীর ও তাঁর ছোট ভাই রাশেদুজ্জামান প্রকৌশলী হুমায়ুনকে মারধর করেন। তাঁকে হামলার হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে একই কার্যালয়ের কার্যসহকারী আশরাফুল আলমও মারধরের শিকার হন।

এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাকিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় হুমায়ুন কবীর ও তাঁর ছোট ভাইয়ের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন এসে আমার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। শিডিউল মোতাবেক কাজ হচ্ছে, চাঁদা দেওয়ার কোনো সুযোগ বা সামর্থ্য নেই বলে জানালে তাঁরা আমাদের ওপর হামলা করে মারপিট শুরু করে। আমি আত্মরক্ষা করার সুযোগ পাইনি। আমাকে বাঁচাতে এসে কার্যসহকারীও আহত হয়েছে।’

লালমনিরহাট জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম আমিরুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রকৌশলী জাকিরুল ইসলাম ও কার্যসহকারী আশরাফুল আলমকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলার প্রশাসনিক ব্যক্তিদের এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। মারধরের শিকার প্রকৌশলীকে মামলা করতে বলা হয়েছে।

মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি এ কে এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাস্তার কাজের মান নিয়ে এলজিইডির প্রকৌশলীর সঙ্গে আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে কথা বলতে যাই। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আমাদের কথা-কাটাকাটি হয়েছে। কিছু ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটেছে। আমি বা আমার ভাই তাঁকে মারপিট করি নাই, চাঁদাও চাই নাই।’

আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা প্রথম আলোকে বলেন, এলজিইডির প্রকৌশলীসহ দুজনকে মারধরসহ চাঁদা দাবির বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তা মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লালমনিরহাট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলা কমিটির সহসভাপতির বিরুদ্ধে একজন প্রকৌশলীসহ দুজনকে মারপিট করার বিষয়ে অবহিত হয়েছি। খোঁজখবর নিয়ে সহসভাপতির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদককে বলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, এ ধরনের ঘটনায় সংগঠনের সুনাম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ঘটনা সত্য হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।