উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে অনশন চলছে

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, ২৪ এপ্রিল। ছবি: সাইয়ান
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল, ২৪ এপ্রিল। ছবি: সাইয়ান

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের অপসারণের দাবিতে গতকাল বুধবার থকে শুরু করা আমরণ অনশন আজ বৃহস্পতিবারও চলছে। আজ পর্যন্ত ১৩ জন শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক এই কর্মসূচিতে আছেন। গতকাল উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি থেকে সরে এসে আজ অপসারণের দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।

আজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া দাবি করেছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৫২ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা তাঁদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। তাঁরা গণপদত্যাগের সম্মতি দিয়েছেন।

আজ দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অনশনরত শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড গরম এবং অনশনের প্রায় ৩০ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ায় তাঁদের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাঁদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। অনশনে যোগ দেননি—এমন শিক্ষার্থীরা তাঁদের শুশ্রূষা দিচ্ছেন।

অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এত দিন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আমরা উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের পদত্যাগ অথবা পূর্ণ মেয়াদে ছুটিতে যাওয়ার দাবিতে আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু এখন আমরা এই দাবি থেকে সরে এসে তাঁর অপসারণ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’

গত মঙ্গলবার রাতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সে অনুযায়ী গতকাল বেলা ১১টা থেকে এই কর্মসূচি শুরু করেন। ওই দিন সকাল থেকেই বেশ কয়েকজন শিক্ষক এই আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা যোগ দেননি। রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ভূতত্ত্ব, খনি বিভাগের চেয়ারম্যান আবু জাফর মিয়া, আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সরদার কায়সার, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার, ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে যোগ দেন।

অন্যদিকে, শিক্ষক সমিতির একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে থাকা শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের গণপদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে। অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর মিয়া গতকাল দুপুরে বলেছেন, ‘আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের তাঁদের বিভিন্ন পদ থেকে গণপদত্যাগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’ তিনি দাবি করেন, এই আহ্বানে গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে দায়িত্বে থাকা ৫২ ব্যক্তি সম্মতি দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রক্টর সুব্রত কুমার সাহা, প্রভোস্ট রাহাত হোসাইন ছাড়াও ছয়টি বিভাগের বিভাগীয় চেয়ারম্যান, টিএসটির পরিচালক, তিনজন সহকারী প্রক্টর, পরিবহনপুলের ব্যবস্থাপকসহ ৫২ ব্যক্তি রয়েছেন।

প্রক্টর সুব্রত কুমার সাহা আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘আমরা কেউ লিখিতভাবে পদত্যাগ করিনি। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে আমাদের পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়েছে। আমরা বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস ধরে অচলাবস্থা চলছে। আমরা পদত্যাগ করলে যদি সেই অচলাবস্থার নিরসন হয়, তবে করব।’

উপাচার্যের পদত্যাগ বা অপসারণ দাবির সঙ্গে একাত্মতা আছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সুব্রত সাহা বলেন, ‘বিষয়টি এমন নয়। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসন হোক। একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয়ের প্রতিই আমাদের দায়িত্বের জায়গা থেকে এটা বলেছি।’

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য জানতে আজ দুপুরে ঢাকায় থাকা উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের মুঠোফোনে ফোন করলে এক ব্যক্তি ফোন ধরে বলেন, ‘স্যার ব্যস্ত আছেন।’ এই প্রতিবেদক তাঁর নাম–পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাম বলতে চাচ্ছি না, আমি ঢাকা অফিসের কর্মকর্তা’ বলে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশাধিকার না দেওয়ার প্রতিবাদে ওই দিন সকাল থেকেই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ওই অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাধ্য হন। পরে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অনুষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর প্রতিবাদে ২৭ মার্চ থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা। পরে মন্তব্যের জন্য উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করলেও শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা হল ছাড়েননি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৬ এপ্রিল রাজনৈতিক নেতা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সমঝোতা বৈঠকে হলেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ওই দিনই তা প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে অনড় থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ১১ এপ্রিল ১৫ দিনের জন্য ছুটিতে যান উপাচার্য এসএম ইমামুল হক। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তাঁর এই ছুটি মঞ্জুর করেন।

উপাচার্য এস এম ইমামুল হকের চার বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৭ মে।