দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখবে জাতিসংঘ

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

মিয়ানমার সীমান্তের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে আশ্রয়ে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গার মানবিক সহায়তার বিষয়ে জানতে আজ বৃহস্পতিবার (দুই দিনের সফরে) কক্সবাজার এসেছেন জাতিসংঘের তিনটি সংস্থার প্রধানেরা। বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন (আরআরআরসি) কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন তাঁরা। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত কার্যকর এবং মর্যাদার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বিশেষ ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া তিনটায় ঢাকা থেকে বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছায় জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক অ্যান্তেনিও ভিটোরিনো এবং জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোককসহ ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল।

এরপরই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা যান কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে তাঁরা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। বৈঠকে জাতিসংঘের কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে জেলা প্রশাসন ও সরকারের মনোভাবের কথা জানতে চান। জবাবে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার চাপ বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা। রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারের স্থানীয় জনসাধারণ দুর্ভোগের শিকার। এখন সাত দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে, সামনে বর্ষা মৌসুম শুরু হবে। নানা দুর্যোগ মোকাবিলা করতে হবে প্রশাসন ও সরকারকে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে জনগণের ফসলি জমি, সংরক্ষিত বন ধ্বংস হচ্ছে। কক্সবাজারের মতো পর্যটন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রধান চাওয়া হচ্ছে অতিদ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। অন্যথায় সংকট আরও বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাঝেমধ্যেই তারা বিচ্ছিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে। খুন খারাবিসহ অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা । জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়নকাজ হয়েছে, পাঁচটি কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচটি বাস দেওয়া হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য গৃহস্থালি সামগ্রী বিতরণ, পানীয়জলের ব্যবস্থা, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ত্রাণ তৎপরতা চলছে। এতে স্থানীয় মানুষ খুশি হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বিগ্ন তাঁরা।

বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।

বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৈঠকে তাঁরা রোহিঙ্গা সংকটের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কী সমস্যা হচ্ছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অভিমত কী, রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, রোহিঙ্গা শিবিরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা মনোভাবের কথা জানতে চেয়েছেন। আমরা স্থানীয় জনগণ ও সরকারের পক্ষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত শুরু করতে জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছি। তাঁরাও এ ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখার আশ্বাস দিয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ায় তাঁরা বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।’

বিকেল চারটায় জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন সৈকত এলাকার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ আবুল কালাম।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত ও কার্যকর এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বিশেষ ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তদারকির দায়িত্বে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দ্রুত ও কার্যকর এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের বিশেষ ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়, ২৫ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

কাল শুক্রবার সকালে জাতিসংঘের প্রতিনিধিদলটি সড়কপথে কক্সবাজার থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যাবে। সেখানে শিবির পরিদর্শনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকের কাজে যুক্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। বিকেল চারটায় তাঁরা কক্সবাজারে ফিরে সৈকতের কাছে একটি তারকা হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন।

গত বুধবার ঢাকায় পৌঁছে জাতিসংঘের তিন কর্মকর্তা জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে হবে, কীভাবে তারা ফেরত যেতে পারে আপনারা আমাদের সহায়তা করতে পারেন।’ জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে আশ্রয় নেওয়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বড় বোঝা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কত দিন তারা এখানে থাকবে?’

উল্লেখ্য, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫১।