নেক ব্লাস্টে কৃষকের মাথায় হাত

>
  • নেক ব্লাস্ট রোগে ধানের শিষের নিচের অংশে কালো দাগ দেখা দেয়
  • পরে সেখানে পচন ধরে
  • এতে ধানের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়
  • দিনে গরম ও রাতে শীতের কারণে বোরো খেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়
  • ব্রি-২৮ ও ব্রি-৫০ জাতের ধানে এই রোগের বেশি প্রকোপ
  • বোরো খেতে মূলত দুই ধরনের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়
  • একটি লিফ ব্লাস্ট ও অপরটি নেক ব্লাস্ট
  • লিফ ব্লাস্ট রোগটি ধানের পাতায় দেখা দেয়
  • নেক ব্লাস্ট দেখা দেয় শিষের নিচের অংশে

কৃষক বাবর আলী সরদার এবার ৫ বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এর মধ্যে তিন বিঘায় ব্রি-২৮ জাত এবং দুই বিঘায় মিনিকেট জাতের ধানের চাষ করেছেন। তাঁর এক বিঘা জমির ব্রি-২৮ জাতের ধানখেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ওই জমি থেকে তাঁর ধান পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাবর আলী সরদারের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামে। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ধানের শিষের গোড়ার দিকে কালো কালো দাগ দেখা দেয়। দেরি না করে মোট তিনবার খেতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেছি। পরে খেতে গিয়ে দেখি ধানের সব শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। ওই জমিতে ধান হবে না। এ পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কেউ এসে খোঁজও নেননি।’

বাবর আলীর পাশের খেতটি উপজেলার জিরাট গ্রামের কৃষক মহসিন মোল্যার। তিন বিঘা জমিতে তিনি ব্রি-২৮ জাতের ধান লাগিয়েছেন। নেক ব্লাস্টে আক্রান্ত হয়ে তাঁর এক বিঘা জমির ধানের শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘কীটনাশকের ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেতে স্প্রে করেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এবার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।’

জেলায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে।

আক্রান্ত একাধিক খেতের ছবি দেখে যশোর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাফিজুর রহমান জানান, পাঠানো ছবির বোরো খেত নেক ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত।

হাফিজুর রহমান বলেন, এ অঞ্চলের বোরো খেতে মূলত দুই ধরনের ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। এর একটি লিফ ব্লাস্ট এবং অপরটি নেক ব্লাস্ট। লিফ ব্লাস্ট রোগটি ধানের পাতায় দেখা দেয়। এই রোগে ধানের পাতায় ছিটা ছিটা ও লম্বাটে বাদামি রঙের দাগ দেখা দেয়। এই রোগ দেখা দিলে ট্রাইসাইক্লাজন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ছিটিয়ে প্রতিকার পাওয়া যায়। নেক ব্লাস্ট দেখা দেয় শিষের নিচের অংশে। নেক ব্লাস্ট রোগে শিষের নিচের অংশে (গলা) কালো দাগ দেখা দেয়। পরে সেখানে পচন দেখা দেয়। এতে ধানের খাদ্য সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে ধানের শিষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়। শিষের সব ধান চিটা হয়ে যায়। ট্রাইসাইক্লাজন গ্রুপের ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও এতে ফল পাওয়া যায় না। তাপমাত্রার তারতম্যের জন্য মূলত ধানে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। দিনে গরম ও রাতে শীতের কারণে বোরো খেতে এই রোগ দেখা দেয়। ব্রি-২৮ এবং ব্রি-৫০ জাতের ধানে এই রোগের বেশি প্রকোপ দেখা দেয়।

অভয়নগরের বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক মাহাবুর গাজী বলেন, ‘আমি এবার ১০ কাঠা জমিতে ব্রি-২৮ জাতের বোরো ধান চাষ করেছি। আমার সম্পূর্ণ জমির ধানের শিষ একেবারেই শুকিয়ে সাদা হয়ে গেছে। ধান কেটেছি। শিষে ধান নেই। শুধু চিটা আর চিটা।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মো. এমদাদ হোসেন শেখ বলেন, জেলায় এবার দেরিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। আগাম গরম এসে গেছে। সুতরাং এবার জেলায় বোরো ধানে কোনো ব্লাস্ট হবে না। তবে কোনো কোনো এলাকায় শিলাবৃষ্টির কারণে কিছু শিষ শুকিয়ে গেছে।