বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা দিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা

বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা। নওয়াব বাড়ি সড়ক, বগুড়া, ২৬ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা
বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা। নওয়াব বাড়ি সড়ক, বগুড়া, ২৬ এপ্রিল। ছবি: সোয়েল রানা

বগুড়া জেলা বিএনপির কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামের অনুসারী নেতা-কর্মীরা।

দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিতণ্ডা, হট্টগোল ও অশোভন আচরণের জেরে সাইফুলসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় গত রাতে বগুড়া শহরের নওয়াব বাড়ি সড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁদের অনুসারীরা।

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল জেলার নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের বৈঠকে হট্টগোলের ঘটনা ঘটে।

শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুলসহ তিন নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

সাইফুলকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর অনুসারী জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পরিমল কুমার দাস এবং বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও জেলা বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক শাহ মেহেদী হাসানের দলীয় সব পদ স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন কার্যালয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বরকতুল্লাহ বুলুর উপস্থিতিতে বগুড়া জেলা বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে দলটির শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের বাগ্‌বিতণ্ডা ও অশোভন আচরণের ঘটনাটি ঘটে।

জেলা সভাপতিকে শোকজ ও দুই নেতার পদ স্থগিত করার খবরে তাঁদের সমর্থকেরা গত রাতে বগুড়া জেলা বিএনপি কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। তাঁরা কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। তিন নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা না হলে কঠোর কর্মসূচির দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এম রুহুল কুদ্দুস তলুকদার গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উদ্ধৃত-অশোভন আচরণ ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় বগুড়ার দুই নেতার দলীয় সব পর্যায়ে পদ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতিকে শোকজ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নয়াপল্টন কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ও জেলার এমন ছয়জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া জেলা বিএনপি পুনর্গঠনে গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বরকতুল্লাহ বুলুর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বগুড়ায় বর্ধিত সভায় আসেন। ওই সভায় স্থানীয় নেতারা জেলা কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় ফিরে গতকাল নয়াপল্টনে জেলা বিএনপির নেতাদের নিয়ে বৈঠক আহ্বান করেন। দলের রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকতের সভাপতিত্বে বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বরকতুল্লাহ বুলু। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য এএইচএম ওবাইদুর রহমান। সেখানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেওয়ার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। সভায় জানিয়ে দেওয়া হয়, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির পরবর্তী নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় এমন এক নেতা নাম প্রকাশ না করে প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া ও ১০ দিনের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ও তাঁর সমর্থকেরা। এ সময় তাঁরা হট্টগোল শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সাইফুলের সমর্থকেরা অশোভন আচরণও করেন। সভায় সাইফুলের সমর্থকদের সঙ্গে দলের সাবেক সাংসদ জিএম সিরাজের বিতণ্ডা হয়।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক শাহীন শওকত বলেন, বৃহস্পতিবারের বৈঠকটি ছিল বগুড়া বিএনপি পুনর্গঠনে। সেখানে জেলা বিএনপির সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে ডাকা হয়নি। অথচ বৈঠকে এমন কিছু নেতা বগুড়া থেকে এসে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে অশালীন, অশোভন ও গঠনতন্ত্রবিরোধী আচরণ করেন।

কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, বগুড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান। সেখানকার মাটি বিএনপির ঘাঁটি। যে কোনো মূল্যে সেই ঘাঁটি ধরে রাখতে হবে। এ কারণে রাজপথের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের হাতে বগুড়া জেলা বিএনপির নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে। দলে বিশৃঙ্খলাকারীদের ঠাঁই হবে না।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুল আলম অভিযোগ করে বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যালয়ে জেলার নেতাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়েছে। উল্টো শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। শাস্তি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা খুলবে না।

ঘটনার বিষয়ে জানতে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামকে একাধিকবার ফোন করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে পদ স্থগিত হওয়া বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কোনো অশোভন আচরণের ঘটনা ঘটেনি।