শয্যার চার গুণ বেশি রোগী

জায়গা না হওয়ায় বারান্দার মেঝেতে রাখা হয়েছে রোগীদের। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গত বুধবার।  প্রথম আলো
জায়গা না হওয়ায় বারান্দার মেঝেতে রাখা হয়েছে রোগীদের। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গত বুধবার। প্রথম আলো

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল এখন রোগীতে ঠাসা। প্রচণ্ড গরমে জ্বর, ডায়রিয়া ও পেটব্যাথায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছে। শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে বর্তমানে ভর্তি আছে প্রায় চার গুণ রোগী। সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটায় সরেজমিনে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের দুটি ইউনিট এবং ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি ওয়ার্ডেই রোগী ঠাসা। শয্যায় জায়গা না হওয়া রোগীদের রাখা হয়েছে ওয়ার্ডের ভেতরে ও বারান্দার মেঝেতে। এরপরও রোগী আসা বন্ধ নেই।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডে হাঁটার জায়গাও নেই। এ অবস্থায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সরা হিমশিম খাচ্ছেন। যোগান দেওয়া যাচ্ছে না প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রের।

শিশু ওয়ার্ডের দুই ইউনিটের মাঝখানের মেঝেতে চিকিৎসাধীন আট মাসের শিশু বিবি খাদিজার মা রুচিয়া খাতুন বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে তাঁর মেয়ের হঠাৎ জ্বর ও কাশি দেখা দিয়েছে। চার দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। হাসপাতাল থেকে সামান্য ওষুধ দেওয়া হয়। আর বাকি সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আরেক শিশু জিদান হোসেনের মা শিউলী আক্তার বলেন, তাঁর ছেলে তিন দিন ধরে জ্বর ও কাশিতে ভুগছে। তিনি এসেছেন সদর উপজেলার কাঞ্চনপুর এলাকা থেকে। গত কয়েক দিনের গরমে এলাকার আরও অনেক শিশুই এ রকম অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি। তিন দিনের চিকিৎসায় তাঁর ছেলে এখন কিছুটা সুস্থ। তবে হাসপাতালে রোগী বেশি হওয়ায় ঠিকমতো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ এই মায়ের।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের দুই ইউনিট, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও হাম-জলবসন্তের একটি ইউনিট মিলিয়ে মোট শয্যা আছে ৬০টি। এই সংখ্যক শয্যার বিপরীতে গতকাল রোগী ভর্তি ছিল ২০০ জন। হাসপাতালে সরকারি ওষুধের সরবরাহ পাওয়া যায় শয্যার অনুপাতে। কিন্তু অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ার কারণে সব রোগীকে চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ দেওয়া যায় না। কিছু ওষুধ রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হয়। তা ছাড়া চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে চিকিৎসক ও রোগীদের হিমশিম খেতে হয়।

হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার সোহেল সারওয়ার এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যাথা নিয়ে দৈনিক গড়ে ২৫-৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এত অধিক সংখ্যক শিশুকে চিকিৎসাসেবা দিতে সমস্যা হচ্ছে।

অন্যদিকে নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক লুৎফুন্নেছা প্রথম আলোকে বলেন, অসুস্থ বেশির ভাগ শিশুই পুষ্টিহীনতার শিকার। পরিবারের সচেতনতার অভাবে শিশুরা ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। খাবারে ভেজাল, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাবও শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. খলিল উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে গড়ে প্রতিদিন রোগী থাকে ৫৫০-৬০০ জন। এখানে ভালো সেবা পায়, এ জন্য রোগীর চাপও বেশি। কিন্তু সরকারি বরাদ্দ পাওয়া যায় ২৫০ শয্যার জন্য। চিকিৎসক, সেবিকা ও অন্যান্য জনবলও ২৫০ শয্যার। এ কারণে সব রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সকল ওষুধ ও সময়মতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এরপরও কেউ সেবা থেকে বঞ্চিত হয় না।