মা-বাবাকে অপমান করায় আত্মহত্যা করে অরিত্রী

অরিত্রী অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত
অরিত্রী অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত
>

• গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অরিত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়
• মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন
• শিক্ষকদের নির্মম আচরণ অরিত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে
• আগামী ১২ মে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হতে পারে

মা–বাবার অপমান ও অসম্মান মেনে নিতে পারেনি রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী। আর এ কারণেই সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। যার দায় কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা এড়াতে পারেন না।

রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় করা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য এসেছে। ঢাকা অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পরিচালক (বর্তমানে সাবেক) মোহাম্মদ ইউসুফের নেতৃত্বে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর অরিত্রী অধিকারীর (১৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে ‘অপমানের অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যা’ শিরোনামে পরদিন প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেদিনই বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন। অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা অনুসন্ধানে কমিটি গঠন করে আদেশ হাতে পাওয়ার এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন আদালত। আগামী ১২ মে হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা হতে পারে।

হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার প্রথম আলোকে বলেন, অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় করা তদন্ত প্রতিবেদনটি হলফনামা আকারে আদালতে দাখিল করা হবে। তদন্ত করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্ত প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সুপারিশসহ মতামত দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে যা আছে
প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতার এবং অরিত্রীর শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনার অশোভন আচরণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং মা–বাবার সঙ্গে অধ্যক্ষ ও শাখাপ্রধানের নির্মম ও নির্দয় আচরণ অরিত্রীকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে, যা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।

তদন্ত কমিটি বলেছে, প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদও ওই পরিস্থিতিকে যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি। তারা সময় ক্ষেপণ করে এবং পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে নানা রকম চেষ্টা করেছে। তাদের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয়, তারা অভিযুক্তদের রক্ষার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দিতে বলা হয়।

তদন্ত কমিটি বলেছে, মুঠোফোন সঙ্গে না আনার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নোটিশ দেওয়া হয়নি। এমনকি পরীক্ষার হলে প্রবেশের সময় তল্লাশি করা হয়নি। পূর্ব সতর্কীকরণব্যবস্থা থাকলে ওই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। মুঠোফোন থেকে নকল করার যে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ দিয়ে তার সত্যতা যাচাই করেনি। উত্তরপত্রের সঙ্গে মুঠোফোনে ধারণ করা পাঠের মিল নেই। ছাত্রীকে টিসি দেওয়ার যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তারও আইনগত কোনো ভিত্তি ছিল না। এই হুমকি, অপমান ও অপদস্থ করার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় অরিত্রী আত্মহননের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়।

অরিত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় তখন ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা আন্দোলনে নামে। পরে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, শাখাপ্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনায় অরিত্রীর বাবার করা মামলায় তিনজনই জামিনে আছেন। অভিযোগপত্র দাখিলের জন্য ৩০ এপ্রিল বিচারিক আদালতে দিন ধার্য রয়েছে জানান অরিত্রীর এক ফুফাতো ভাই সৌমিত্র সরদার।