মহাসড়ক সংস্কারে ধীরগতি

জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক মহাসড়কে সংস্কারকাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। সেতু নির্মাণের পর গর্ত ভরাট করা হয়নি। গতকাল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুরিয়া এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
জয়পুরহাট-মোকামতলা আঞ্চলিক মহাসড়কে সংস্কারকাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। সেতু নির্মাণের পর গর্ত ভরাট করা হয়নি। গতকাল বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুরিয়া এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-জয়পুরহাট (মোকামতলা-জয়পুরহাট) ও বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক দুই মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলছে ধীরগতিতে। প্রায় এক বছর ধরে পুরোনো পিচ তুলে বালু-পাথর-খোয়া ফেলে রেখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন লাপাত্তা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততা উন্নীতকরণের জন্য ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এই প্রকল্পের অধীনে মোকামতলা-জয়পুরহাট ও বগুড়া-নওগাঁ সড়ক ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীতকরণের জন্য আলাদাভাবে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

সওজ সূত্র জানায়, মোকামতলা-জয়পুরহাট মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটার অংশ প্রশস্তকরণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন। অবশিষ্ট ১০ কিলোমিটার অংশের কাজ পায় রুহুল আমিন ভূঁইয়া রাইজিং কনস্ট্রাকশন ও প্যারাডাইস ট্রেডার্স নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। দরপত্র অনুযায়ী সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে মাটি খুঁড়ে খোয়া-বালু দিয়ে ভরাট করার কথা। এ ছাড়া পুরোনো পিচ-খোয়া তুলে ফেলে প্রথমে ৬ ইঞ্চি পুরো খোয়া-বালু (বেজ টাইপ-২), ৬ ইঞ্চি পাথর (বেজ টাইপ-২) এবং ৭১ ও ৫০ মিলিমিটার আলাদা দুই বেডে বিটুমিনের চূড়ান্ত লেয়ার ছাড়াও আমতলী এবং কিচক বাজারে ৬০০ মিটার ঢালাই দেওয়ার কথা। গত বছরের ১৮ জানুয়ারি কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করে নাভানা কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। প্রায় কাছাকাছি সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা অন্য ঠিকাদারের।

নাভানা কনস্ট্রাকশন মহাসড়কের মোকামতলা থেকে কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এবং মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত অংশসহ মোট ২৭ কিলোমিটার অংশের ইট-খোয়া-কার্পেটিং তুলে ফেলেছে। কিছুদিন কাজ করার পর শ্রমিকেরা কাজ ফেলে এলাকা ছেড়ে যান। সড়কের অবশিষ্ট অংশের মধ্যে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে বিটুমিন বিছানোর কাজ শেষ হয়েছে। মোকামতলা থেকে কালাই উপজেলা সদর পর্যন্ত জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হরিপুর বাজর, কিচক বাজার, বলরামপুর বাজার, সাদুরিয়া বাজার, পুনট বাজার, শিমুলতলী, পাঁচশিরা বাজার এবং কালাই বাজার এলাকায়। এসব স্থানে ইট-বালু ফেলে রাখায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে গর্ত আর খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।

৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের তিনটি প্যাকেজের মধ্যে নাভানা কনস্ট্রাকশন পেয়েছে ৩০ দশমিক ৫ কিলোমিটার অংশ প্রশস্তকরণের কাজ। ১২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ পেয়েছে মেসার্স আজিজুল হক ও এমএম বিল্ডার্স নামে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান। গত বছরের জানুয়ারি ও মার্চে দেওয়া কার্যাদেশ অনুযায়ী নাভানা কনস্ট্রাকশনের আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে এবং অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। অথচ বগুড়ার গোদারপাড়া থেকে নওগাঁর সান্তাহার পর্যন্ত পুরো সড়কই এখন বেহাল। যান চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।

জানতে চাইলে সওজ বিভাগের বগুড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি সড়কেই নাভানা কনস্ট্রাকশনের কাজের অগ্রগতি হতাশাব্যঞ্জক। কার্যাদেশের মেয়াদ প্রায় শেষ হয়ে এলেও এখন পর্যন্ত তারা ৪০ শতাংশ কাজ শেষ করেছে। পিচ-খোয়া তুলে এভাবে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখায় জনদুর্ভোগ হচ্ছে।

চারটি আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের পরিচালক ও সওজ রংপুর জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফকির আবদুর রব বলেন, ‘কার্যাদেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে। আমরা কার্যাদেশের মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা করব।’

নাভানা কনস্ট্রাকশনের মহাব্যবস্থাপক আকবর আলী বলেন, কার্যাদেশের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিটুমিন বিছানো ছাড়া বাকি সব কাজ শেষ হবে।