নড়াইলে দেড় শ বছরের নিশিনাথ ঠাকুরের মেলা শুরু

নিশিনাথতলার পুরোনো পাকুড়গাছে দুধ ও জল ঢালছেন ভক্তরা। ছবি: প্রথম আলো
নিশিনাথতলার পুরোনো পাকুড়গাছে দুধ ও জল ঢালছেন ভক্তরা। ছবি: প্রথম আলো

নড়াইলে দেড় শ বছরের পুরোনো নিশিনাথ ঠাকুরের মেলা শুরু হয়েছে। প্রতিবছর বৈশাখ মাসে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তদের বিশ্বাস, এ সময় মন্দিরের সামনে দিয়ে বয়ে চলা চিত্রা নদীতে স্নান করে ভেজা কাপড়ে নিশিনাথতলার পুরোনো পাকুড়গাছে দুধ ও জল ঢালা পুণ্যের কাজ।

ভক্তরা আরও বিশ্বাস করেন, নিশিনাথ ঠাকুরের সন্তুষ্টি লাভের মাধ্যমে পাপমোচন হয়। পাকুড়গাছে ইট বেঁধে রাখলে মনোবাসনা পূরণ হয়। গাছে দুধ ও জল ঢেলে তার নিচে বসে স্নান করলে রোগমুক্ত হওয়া যায়। এ বিশ্বাস নিয়ে প্রায় ১৫০ বছর ধরে এই স্নান এবং গাছে জল ঢালায় অংশ নেওয়ার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য ভক্ত আসেন নিশিনাথতলা মন্দিরে।

গতকাল সোমবার নড়াইল সদর পৌরসভায় সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সামনে এ মেলা শুরু হয়েছে। চলবে বৈশাখ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত। স্থানীয়ভাবে এটি নিশিনাথতলার মেলা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

মালতী রানী বিশ্বাস ও শ্রাবন্তী রানী বিশ্বাসের বাবার বাড়ি সদর উপজেলার মুশুড়িয়া গ্রামে। ১৫ বছর ধরে থাকেন ভারতের চাকদহ এলাকায়। গতকাল তাঁরা এসেছেন নিজেদের সন্তানদের মানত পূরণ করতে। চিত্রা নদীতে স্নান করে পাকুড়গাছের মোটা ডালের নিচে সন্তানদের বসিয়ে গাছে জল ঢেলেছেন। উপবাস থেকে মন্দিরে পূজা দিয়েছেন। এমন অনেক ভক্ত দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন মানত পূরণ করতে বা পুণ্য অর্জনে।

‘যশোর এবং নড়াইলের ইতিহাস’ বই সূত্রে জানা গেছে, অতীতে নিশিনাথ নামের এক ডাকাত সরদার তাঁর দলবল নিয়ে এখানকার গভীর বনে আশ্রয় নিয়ে নদীপথে যাতায়াতকারী পণ্যবাহী যানে ডাকাতি করতেন। বাগানের একটি পাকুড়গাছের নিচেই ছিল তাঁর আস্তানা। চিত্রার পাড় দিয়ে ছিল পায়ে চলার পথ। একদিন এক বৃদ্ধা এই পথ দিয়ে হেঁটে তাঁর মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই ডাকাত নিশিনাথের কথা মনে পড়ে গেলে ফেরার পথে তাঁর উদ্দেশ্যে পূজা-অর্চনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরাপদে তিনি যেতে সক্ষম হন। ফেরার পথে ওই বৃদ্ধা যথারীতি নিশিনাথের উদ্দেশ্যে পূজা-অর্চনা দেন। এ খবর নিশিনাথের কানে পৌঁছায়। ওই বৃদ্ধার নিরাপদে বাড়ি ফেরার বিষয়টি সবাইকে অবাক করে। এরপর থেকে এই পথে যাতায়াতকারী ব্যক্তিরা নিশিনাথের নামে পূজা-অর্চনা দিতে থাকেন এবং নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে থাকেন। মানুষের পূজা-অর্চনা পেয়ে ডাকাত নিশিনাথের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। একপর্যায়ে নিশিনাথ পাপের অনুশোচনা নিয়ে ডাকাতি ছেড়ে দেন। প্রতিদিন ভোরে চিত্রা নদীতে স্নান করে ওই পাকুড়গাছের তলায় ঈশ্বরের আরাধনায় মগ্ন হয়ে তিনি সিদ্ধি লাভ করেন এবং গাছতলাতেই দেহত্যাগ করেন। পরে সেখানে নির্মিত হয় একটি ছোট মন্দির। আর সেই থেকে এ স্থানের নাম হয় শ্রীশ্রী নিশিনাথতলা মন্দির।

মন্দির কমিটির সভাপতি অচীন চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রতিবছর বৈশাখ মাসে এখানে বসে নিশিনাথতলার মেলা। তিনি বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকে দেখে আসছি বিশাল এলাকাজুড়ে মেলা বসে।’ তিনি জানান, মেলা উপলক্ষে কুটিরশিল্প, সার্কাস, পুতুলনাচ, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানসহ ৬৪ প্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে হাজারো ভক্ত পূজা-অর্চনা দিতে আসেন।