সব জেলে তীরে ফিরে আসেননি

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সব কটি পয়েন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা হিসেবে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। বিকেল থেকে মেঘলা আকাশ ও দমকা বাতাস ঘূর্ণিঝড় ফণীর আভাস দিচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেই হাজারো পর্যটক সৈকতে ভিড় করেছেন। অন্যদিকে শহরের শেষ সীমানায় জেলেদের নৌকা ভেড়ানোর স্থান ফিশারি ঘাটে একে একে জেলেনৌকাগুলো ফিরতে শুরু করেছে। তবে সন্ধ্যায় ওই ঘাটে গিয়ে জানা গেল, এখনো অর্ধেক জেলেনৌকা তীরে ফেরেনি।

বঙ্গোপসাগর থেকে গতকাল বিকেলে ঘাটে ফিরেছে মো. আলমের জেলেনৌকাটি। তাঁর কপালে চিন্তার বলিরেখা। প্রায় ১০ হাজার টাকার তেল পুড়িয়ে তিন দিন আগে তাঁর নৌকাটি সাগরে গিয়েছিল। ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় উঠে যাওয়ার পর সাগরে মাছের পরিমাণ বেড়ে গেছে। ইলিশ, রুপচাঁদা, ফাইসাসহ নানা জাতের মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে ধরাও পড়ছিল। কিন্তু ৪ নম্বর সতর্কসংকেত আর ঘূর্ণিঝড় ফণী আসার খবর পেয়ে ফিরে এসেছেন তিনি।

চিন্তিত আলম বললেন, ‘ট্রলারের মধ্যে ২০ হাজার টাকার তেল খাই ফেলছে, কিন্তু ২০ হাজার টাকার মাছ তো জালত উঠে নাই।’ ফিশারি ঘাটের অর্ধেক জেলে এখনো সাগরে। মাছ ধরার লোভ যারা সামলাতে পারেনি, তারা ঘূর্ণিঝড় ফণীকে ভয় পাচ্ছে না—পাশ থেকে বললেন আরেক জেলে মোখলেস হোসেন।

কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, সেন্ট মার্টিনের কয়েক হাজার জেলে এখনো সাগরে আছেন বলে জানান ফিশারি ঘাটের জেলেরা। তবে যাঁরা পাঁচ–ছয় দিন আগে গেছেন, তাঁদের অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন। সাগর উত্তাল হলে মাছ বেশি ধরা পড়ে, এই কথা জেলেদের চেয়ে আর কে বেশি জানেন। এই কথা বলছিলেন পাশে দাঁড়ানো আরেক জেলে খালেদ হোসেন।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। কলাতলি বিচ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার, ৩ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন
ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। কলাতলি বিচ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কক্সবাজার, ৩ এপ্রিল। ছবি: সাজিদ হোসেন

৪ নম্বর সতর্কসংকেত দেওয়ার পরেও সব জেলে কেন তীরে ফিরলেন না—এই প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজার জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রশাসক মোহাম্মদ আফরাফুল আফসার প্রথম আলোকে বলেন, কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর সব জেলে নিরাপদ স্থানে চলে এসেছেন। বাকিরা আজকের মধ্যে চলে আসবেন। যদি ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কসংকেত আরও বাড়ে, তাহলে তাঁদেরকে ভূমিতে নিয়ে আসা হবে।

জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মের এই সময়টা কক্সবাজার উপকূলে মাছ ধরার সবচেয়ে ভালো সময়। এই সময়ে সমুদ্রে ঢেউ বেশি থাকে। ফলে সাগর থেকে মাছ উপকূলের দিকে বেশি আসে। ফলে এই সময়টাতে একেকটি বড় নৌকায় প্রতিদিন ২০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার পর্যন্ত মাছ ধরা পড়ে। ফলে এক সপ্তাহ আগে থেকে জেলেরা দলে দলে ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে মাছ ধরতে চলে যান। ট্রলারের মালিকেরা মূলত জেলেদের শ্রমিক হিসেবে ভাড়া করে মাছ ধরতে পাঠান। সাগরে একেক দিন একেকটি ট্রলারে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার তেল খরচ হিসেবে লাগে। ফলে ঝড়ের সতর্কসংকেত থাকলেও ট্রলারের মালিকেরা উপকূলে ফিরতে নিষেধ করেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সমিতির আওতায় এক হাজার বৈধ নৌকা আছে। তারা সবাই ফিরেছে। বেশ কিছু অবৈধ নৌকা আছে, সেগুলো ফিরেছে কি না আমি জানি না।’