সাতক্ষীরায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, আশ্রয়কেন্দ্রে মৃত ১

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সাতক্ষীরার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি প্রায় চার ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাইনবাড়ি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে এক বৃদ্ধার মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বাঁধ মেরামতসহ যেকোনো সমস্যা মোকাবিলায় তাঁরা প্রস্তুত।

আজ শনিবার সকাল ১০টার পর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে। তখন নদ-নদীতে ভাটা থাকায় পানি তেমন বৃদ্ধি পায়নি।

শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ভোররাত চারটার দিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড বেগে দমকা বাতাস শুরু হয়। বাতাসের তোড়ে কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়ে। আঠুলিয়া ইউনিয়নের বিড়ালক্ষ্মী গ্রামের কয়েকটি ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। গাবুরা এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর একটি এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে ভাঙনের ঝুঁকি দেখা দিলে রাতেই তা মেরামত করা হয়।

গাবুরা এলাকায় কয়েকটি কাঁচা ঘরের ছাউনি উড়ে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আবাসন প্রকল্পের ২২টি ঘরের ছাউনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেবহাটা উপজেলার কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ছাউনি উড়ে গেছে। এ ছাড়া সিংহড়তলী আশ্রয়কেন্দ্রের জানালা ভেঙে গেছে দমকা বাতাসে।

আজ শনিবার সকালে শ্যামনগর উপজেলার দাতনিখালি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, তখনো চার শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে। রাতে প্রায় এক হাজার মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া দাতিনাখালি গ্রামের খুশীমন বিবি (৬৫) জানান, রাতে ও সকালে কোনো ধরনের খাবার তাঁকে দেওয়া হয়নি।

একই গ্রামের সাহারা খাতুন (৬০) বলেন, তাঁকে সকালে মুড়ি দেওয়া হয়েছে। সোনাই বেগমও (৭০) একই কথা জানান।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজন সরকার বলেন, গাইনবাড়ি সাইক্লোন শেল্টারে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে আইনা বিবি (৯২) নামের একজন অসুস্থ বৃদ্ধার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। ৪০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে তাৎক্ষণিকভাবে অবস্থান করায় তাদের খাবার সরবরাহে সামান্য ত্রুটি হতে পারে। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের বলা ছিল পর্যাপ্ত খাদ্য রয়েছে, প্রয়োজন হলেই সরবরাহ করা হবে।

মুন্সিগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল বলেন, তাঁর ইউনিয়ন পরিষদে স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৪টি সাইক্লোন শেল্টারে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। তিনি জানান, সরকারিভাবে তাঁর ইউনিয়নের জন্য চার বস্তা চিড়া, দুই বস্তা মুড়ি, এক বস্তা চিনি ও ৮০০ কেজি চাল শুক্রবারে বরাদ্দ দেওয়া হয়, প্রয়োজনের তুলনায় যা অপ্রতুল। এ জন্য তিনি স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে চিড়া ও মুড়ি সহযোগিতা নিয়েছেন। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চিড়া কিনেছেন। তারপরও দু-একটি সাইক্লোন শেল্টারে পানি ও খাবারের কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।

ভবতোষ কুমার মণ্ডল বলেন, বড় দুর্গাবাটি ও দাতিনাখালি স্থান দুটির বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। কোনো ধরনের অঘটন যেন না ঘটে, এ জন্য বাঁধ মেরামতের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, দমকা বাতাস হচ্ছে। উপজেলার খোলপেটুয়া নদীর হরিশখালী, হিজলিয়া, কোলা, কপোতাক্ষ নদের চাকলা, সুভাদ্রকাটি, শ্রীপুর ও কুড়িকাউনিয়া এলাকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইতিমধ্যে শ্রীপুর ও কুড়ি কাউনিয়া এলাকার বাঁধ মেরামত করা হয়েছে।

আশাশুনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আলিফ রেজা জানান, প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আজ সকাল নয়টার পর থেকে আবহাওয়া ভালো থাকায় মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগ-১–এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রা উপজেলার ১৫-২০টি স্থানের বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে প্রতিটি স্থানে তাঁদের প্রস্তুতি রয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে চার ফুট বেশি।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার শেখ দিদারুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ফণী সাতক্ষীরা জেলায় দিবাগত রাত তিনটার দিকে আঘাত করে। ওই সময় ফণীর সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৫৮ কিলোমিটার। এর প্রভাব আগামীকাল সকাল ছয়টা পর্যন্ত থাকতে পারে।