১৩ বছর পর মায়ের কোলে ফিরল নাঈম

১৩ বছর পর নাঈমকে মা-বাবার হাতে তুলে দিচ্ছেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল। যশোর, ৫ মে ২০১৯। ছবি: মনিরুল ইসলাম
১৩ বছর পর নাঈমকে মা-বাবার হাতে তুলে দিচ্ছেন যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল। যশোর, ৫ মে ২০১৯। ছবি: মনিরুল ইসলাম

‘আমি বাড়ি যাব। মার কাছে ঘুমাব। বাড়ি গিয়ে মাঠে যাব। ছাগলের জন্য ঘাস কাটব।’ কথাগুলো নাঈমের (২০), যিনি ১৩ বছর আগে হারিয়ে ফেলেছিলেন মা-বাবাকে। এত দিন পর রোববার মাকে দেখে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নাঈমের প্রথম কথা ছিল এগুলো। ১৩ বছর আগে নাঈমের বয়স যখন ছিল ৭, তখন তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে নিখোঁজ হন। এরপর তাঁর জীবনের এতটা সময়টা কেটেছে যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। তবে বেশ কাকতালীয়ভাবে তিনি ফিরে পেলেন তাঁর মা-বাবাকে।

রোববার দুপুরে যশোর সার্কিট হাউস চত্বরে জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল নাঈমকে তাঁর মা-বাবার হাতে তুলে দিয়েছেন। এ সময় মা-বাবা ও ছেলের আবেগঘন অভিব্যক্তিতে এক অন্য রকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

নাঈমের বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার সুবর্ণখোলা গ্রামে। তিনি ওমর আলী বিশ্বাস ও আছিয়া বেগমের ছেলে। ঢাকা থেকে নাঈম ২০০৬ সালে নিখোঁজ হন। এরপর ২০০৭ সালে মাগুরার এক আদালতের মাধ্যমে যশোরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে ঠিকানা হয় তাঁর। তখন থেকে তিনি রয়েছেন ওই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে।

নাঈমের মা আছিয়া বেগম বলেন, ‘আমরা তখন ঢাকার মোহাম্মদপুর থাকতাম। ২০০৬ সালের ৮ এপ্রিলে নাঈম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এরপর অনেক জায়গায় তাকে খুঁজেছি। থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। পত্রিকায় নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তিও ছাপানো হয়। ১৩ বছর ধরে তাকে খুঁজছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। মাসখানেক আগে আমাদের বাড়ির পাশের একজন আনসার সদস্য যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বদলি হয়ে আসেন। তিনি নাঈমকে দেখেই চিনে ফেলেন। পরে আমাদের জানান। এরপর আমরা সেখানে গিয়ে নাঈমকে পাই।’

নাঈমের বাবা ওমর আলী বিশ্বাস বলেন, ‘আমার চার ছেলে-মেয়ে। নাঈম মেজো। ওকে ফিরে পেয়ে আমরা খুব খুশি।’

কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৪ মে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার তৎকালীন প্রথম শ্রেণির আদালতের নির্দেশে নাঈমকে যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এরপর থেকে এখানেই ছিলেন নাঈম। তবে চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের নির্দেশে নাঈমকে তাঁর পরিবারে কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, নাঈমের পুনর্বাসনের জন্য দাতা সংস্থা ইউনিসেফের দেওয়ার ১০ হাজার টাকা তাঁর পরিবারকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তিনি যাতে প্রতিবন্ধী ভাতা পান, এ জন্য রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আশা করা যায় নাঈম প্রতিবন্ধী ভাতা পাবেন।

রোববার দুপুরে যশোরের জেলা প্রশাসক আবদুল আওয়াল নাঈমকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।