তারাগঞ্জে হুমকিতে সড়ক ও সেতু

আইন অনুযায়ী, সেতু ও সড়কের পাশ থেকে বালু তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু এই আইন লঙ্ঘন করে রংপুরের তারাগঞ্জের বরাতি সেতু, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের ঘনিরামপুর এলাকা ও বুড়িরহাট-ঘোনপাড়া রাস্তার রহিমাপুর গ্রাম এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে সেতু, মহাসড়ক ও রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর রংপুর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে কুর্শা ইউনিয়নের পাটনীপাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনেশ্বরী নদী। এই নদীর ওপর ১৯৭০ সালে ১২০ মিটার দীর্ঘ বরাতি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে নির্মিত এই সেতুর ওপর দিয়ে দিনাজপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর জেলার ২০ হাজার মানুষ ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।

এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন, বরাতি সেতুর দক্ষিণ পাশে নদীতে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে এক মাস ধরে বালু তুলছেন শলেয়া শাহ গ্রামের বাসিন্দা নিঠু মিয়াসহ কয়েকজন। বালু তোলার পর তাঁরা তা বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করছেন। বালু তোলার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। অথচ বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ৪ নম্বর ধারার খ-উপধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, সড়ক, মহাসড়ক, বাঁধ, বন, রেললাইন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি–বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্য থেকে বালু তোলা যাবে না।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, যেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তার আনুমানিক ২০০ গজ পশ্চিম-পূর্ব দিকে বরাতি সেতু। দক্ষিণ দিকে ৩০০ গজ দূরে পাটনীপাড়া গ্রাম। নদীর এক কিনারে শ্যালো মেশিন বসিয়ে পাইপের মাধ্যমে বালু তুলে সেতুর পাশে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারাগঞ্জে সেতুর কাছ থেকে প্রতিদিন ১০-১২টি ট্রলি বালু নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রলিতে ১০০ ঘনফুট বালু ধরে। প্রতিটি ট্রলি কমপক্ষে ছয়বার ওই স্থান থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে, এই স্থান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার ঘনফুট বালু বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

পাটনীপাড়া গ্রামের দিনমজুর মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘খালি মুই নোয়াও আইনের লোকজনও পুল কোনার ওপর দিয়া যাতায়াত করার সময় বালু তুলছে। তা–ও কেনবা ওমরা ওপর ব্যবস্থা নেওছে না। ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিন-রাত বালা তোলাছে।’

বড় গোলা গ্রামের যুবক আনছারুল হক বলেন, ‘দিনে-রাতে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা বালু তোলা হয়। বাধা দিলেও বালু উত্তোলনকারীরা তা শুনছে না। উল্টো আমাকে জেলে ঢুকানোর ভয় দেখাচ্ছে।’

জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী নিঠু মিয়া বলেন, ‘মোক কায়ও বালা তোলা বন্ধ কইরার কয় নাই (আমাকে কেউ বালু তোলা বন্ধ করতে বলেনি)। আর মুই কাকো ভয়ও দেখাও নাই। নদী থাকি বালা (বালু) তোলা যে অন্যায়, তা–ও মুই জানো না। এ্যালা জাননু আর দুই-তিন দিন পর বালা তোলা বন্ধ করিম।’

রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের গাঁ ঘেঁষে তারাগঞ্জ উপজেলার ঘনিরামপুর গ্রামে কাজী ফার্মের কাছে পুকুর খনন করে বালু তুলে বিক্রি করছেন এক ব্যক্তি। এতে মহাসড়কের ওই স্থান হুমকির মুখে পড়েছে। ঘনিরামপুর গ্রামের কয়েকজন অভিযোগ করেন, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে নিজের এক একর জমিতে পুকুর খনন করে শ্রমিক দিয়ে বালু তুলছেন ঘনিরামপুর গ্রামের জাকির হোসেন। এক মাস ধরে তিনি এভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন।

স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, প্রতিদিন এই স্থান থেকে ছয়টি ড্রাম ট্রাকে বালু তুলে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিটি ড্রাম ট্রাকে ৪০০ ঘনফুট বালু ধরে। প্রতিটি ট্রাক চারবার করে ওই স্থান থেকে বালু নিয়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে, প্রতিদিন ওই স্থান থেকে ৯ হাজার ৬০০ ঘনফুট বালু বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।

মহাসড়কের পাশে পুকুর খনন বিষয়ে জানতে চাইলে জাকির হোসেন বলেন, ‘নিজের জমিতে পুকুর খনন করছি, তাতে আপনাদের সমস্যা কী? এখন ব্যস্ত, পরে কথা বলব।’

উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে রহিমাপুর গ্রামের পাশে বুড়িরহাট-ঘোনপাড়া তিন কিলোমিটার দীর্ঘ কাঁচা রাস্তা। ওই রাস্তা দিয়ে বৈদ্যনাথপুর, রঘুনাথপুর, পূর্ব রহিমাপুর, খানপাড়, বাঙালিপুর, ঘোনপাড়াসহ ছয়টি গ্রামের আট হাজার মানুষ সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে।