দিনাজপুরে পাসের হার বাড়লেও গণিতের কারণে কমেছে জিপিএ ৫

সারা দেশে আজ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গণিতে পাস করতে না পারায় এ সংখ্যা কমেছে। এ বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে পাসের হারে এগিয়ে আছে গাইবান্ধা জেলা। এ বছর অনুষ্ঠিত দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এবার গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৪ হাজার ৯১০ জন। গণিত বিষয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পাস করতে না পারার বিষয়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তোফাজ্জুর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সৃজনশীল পদ্ধতির পাঠদান প্রক্রিয়ায় গণিত বিষয়ে ভালো মানের শিক্ষকের সংখ্যা খুবই কম। তাই গণিতে শিক্ষার্থীরা ফল খারাপ করেছে বেশি। তা ছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের গণিতভীতি আছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সোমবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ সব কথা বলেন মো. তোফাজ্জুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (মাধ্যমিক) মো. মানিক হোসেন, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চ মাধ্যমিক) মো. হারুন অর রশীদ মণ্ডল, বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল, কলেজ পরিদর্শক মো. ফারাজউদ্দীন তালুকদার, সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮০৫ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় পাস করেছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ১৩৫ জন। এ বছর পরীক্ষায় পাসের হার ৮৪.১০ শতাংশ। এবারে পাসের হার গত দুই বছরের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৭ সালে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৩.৯৮ শতাংশ, ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৭৭.৬২ শতাংশ।

এবারে পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় এই শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ২৩ জন। তাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্র ৪ হাজার ৮৪১ জন এবং ছাত্রী ৪ হাজার ১৮২ জন। গত বছর ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৭৫৫ জন।

এবারে মানবিকে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৩ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৭৭ হাজার ৪৩০ জন। বিজ্ঞানে পরীক্ষার্থী ছিল ৮৯ হাজার ৯৭৪ জন। তাদের মধ্যে পাস করেছে ৮৪ হাজার ১৮৭ জন। ব্যবসায় শাখায় পরীক্ষার্থী ছিল ৫ হাজার ২৬৫ জন। পাস করেছে ৪ হাজার ৫১৮ জন।

এ বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের মোট ৮ জেলার মধ্যে ফলাফলের দিক থেকে এগিয়ে আছে গাইবান্ধা জেলা। এ জেলায় মোট পাসের হার ৮৭.৪০ শতাংশ। এ ছাড়াও রংপুরে ৮৫.২২, কুড়িগ্রামে ৮৩.৯১, দিনাজপুরে ৮৫.২১, নীলফামারীতে ৮৪.৫৪, পঞ্চগড়ে ৭৮.৭২, ঠাকুরগাঁওয়ে ৭৯.৮১ এবং লালমনিরহাটে পাসের হার ৮৩.৩৮ শতাংশ। এ বছর সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে রংপুর জেলা থেকে। এই জেলায় ২ হাজার ৪৩৫, গাইবান্ধায় ১ হাজার ২৭, নীলফামারীতে ১ হাজার ১১৬, কুড়িগ্রামে ৭০৩, লালমনিরহাটে ৪২৫, দিনাজপুরে ১ হাজার ৯৯৪, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৫১ এবং পঞ্চগড়ে ৩৭২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ হাজার ৬৩০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিল। ২৬৭টি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শতভাগ পাস করেছে এমন স্কুলের সংখ্যা ১৩৮, যা গত ২ বছরের তুলনায় বেড়েছে। ২০১৭ সালে শতভাগ পাস করা স্কুল ছিল ১৬৬টি এবং ২০১৮ সালে ছিল ৮৪টি স্কুল। এ বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে শুধু কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার দেশিয়ার চারা গার্লস হাইস্কুল থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পরীক্ষায় পাস করেনি।

গণিতে পাসের হার কম হওয়ার কারণ হিসেবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের আমেনা-বাকী রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিত শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘প্রথমত গণিতে ভালো করতে হলে অনুশীলনের বিকল্প নেই। সরকার গণিতে যেভাবে সৃজনশীল পদ্ধতি প্রণয়ন করেছে, সেই মোতাবেক শিক্ষকদের তেমন কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেনি। আমরা যারা গণিত পড়াই অনেক সময় সৃজনশীল পদ্ধতির গণিত বুঝতে আমাদেরই হিমশিম খেতে হয়। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের মাঝে গণিতভীতি প্রচণ্ড রকমের।’